বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একটি ব্রিজ কেউ করে দিল না

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৪৭

একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের দু’পাড়ের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারও মানুষ। খালের ওপর সেতু না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হয়।

‘সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু একটি ব্রিজ কেউ করে দিল না। দেশের এত উন্নয়ন, তবু আমাদের এলাকার উন্নতির জন্য একটি ব্রিজের দাবি পূরণ হলো না।’

এভাবে আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন এলাকার মানুষ।

খালের ওপর নির্মাণ করা গ্রামবাসীর তৈরি চারটি বাঁশের সাঁকোই খালের দুই পারের মানুষের একমাত্র ভরসা।

একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুই পারের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারও মানুষ। জমিতে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে গিয়ে একদিকে কৃষকরা যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন, তেমনি শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারীদেরও পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

খালের অন্য পাশে কেন্দ্রীয় গোরস্তানে মরদেহ নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। তাই দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গ্রামের নাম জামগ্রাম ও তিলাবদুরী। গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে রতনডারা খাল, যাতে বছরজুড়ে পানি থাকে। সম্প্রতি এলজিইডির আওতায় পুনঃখনন হওয়ায় খালটি অনেক গভীর হয়েছে। খালের পূর্বপাশে শত শত পরিবারের বসবাস। পশ্চিম দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। গ্রামের শত শত কৃষক এ মাঠেই বোরো, আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন।

খালের ওপর সেতু না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হয়।

খালের পশ্চিমে রয়েছে গ্রামবাসীর কবরস্থান। যেখানে মরদেহ বয়ে নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

এই খালের তিলাবদুরী নামক স্থানে একটি, জামগ্রাম মাদ্রাসা বাজারসংলগ্ন স্থানে একটি, জামগ্রাম পশ্চিমপাড়াসংলগ্ন স্থানে একটি ও জামগ্রাম ঢাকাপাড়াসংলগ্ন স্থানে একটি বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে ১০-১২টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাকে।

প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। অস্থ রোগীদের ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পাড়ি দিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়।

এলাকাবাসী জানায়, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনে এখানে একটি সেতু নির্মাণ অতি জরুরি।

স্থানীয় জামগ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, তবু আমরা আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত। রাস্তা পারাপারের জন্য নেই ব্রিজ। সরকার আসে সরকার যায়, আমাদের সেতু কেউ করে দেয় না। একটি সেতুর অভাবে কত ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা কেউ বুঝতে চায় না।’

জনি হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের জামগ্রামের পাশে তিন কিলোমিটার দূরে ভোঁপাড়া গ্রামে স্কুলে যায় এই গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী। যখন সাঁকো ভাঙা থাকে, তখন আরও বিপদ। ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরে ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করে ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।’

তিলাবদুরী গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া খাতুন বলে, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে ভোঁপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে অনেক সময় ভয় লাগে। একবার সাঁকোতে পা আটকে গিয়েছিল। একটি ব্রিজ আমাদের দরকার।’

আব্দুল মান্নান, মিজানুর রহমান, মোসলেম উদ্দিনসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, জনপ্রতিনিধিরা কেবল আশার বাণী শুনিয়েছেন, সেতু হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে এলজিইডি নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জামগ্রাম ও তিলাবদুরী গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে চারটি বাঁশের সাঁকো আছে। আমরা পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ওই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি খালের ওপর একটি পাকা সেতু। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে জানিয়ে নওগাঁ-৬ আসনের (আত্রাই-রাণীনগর) সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ‘ফসল আনা-নেওয়া, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ খুবই জরুরি। আমি এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য যা যা করা দরকার, সেটা করব। আশা করছি, এ ভোগান্তি আর বেশি দিন পোহাতে হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর