বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেঁচো সারের খামারে উৎসাহ কৃষকের

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:২৮

খামারি টুক্কু মুক্তার বলেন, ‘ড্রাগন চাষি, ছাদবাগানি ও সবজি চাষিরা আমার কাছ থেকে কেঁচো সার কেনেন। বর্তমানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কেঁচো সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাইকারি ১ কেজি কেঁচো সার ১৫ টাকা দরে ও ১ কেজি কেঁচো ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ বাড়ছে খামারিদের। সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে জেলাটির অনেক কৃষক শুরু করেছেন কেঁচো সারের খামার।

রিং বা চাড়িতে নয়, এবার মাঠেই উৎপাদন হচ্ছে কেঁচো সার। আর এ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ভিয়েতনাম পদ্ধতি। খরচ কম হওয়ায় এ পদ্ধতিতে সার উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন অনেক কৃষক।

সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়সংলগ্ন হাট পোড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক ও খামারি টুক্কু মুক্তার। তিনি বছরখানেক আগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি বরাদ্দে তিনটি রিং দিয়ে প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিলেন কেঁচো সারের খামার। তার সফলতা দেখে পরে তাকে ফের ২০টি রিং দেয়া হয় সরকারি বরাদ্দে। টুক্কুর কাছে রিং পদ্ধতিতে কেঁচো সার তৈরি ব্যয়বহুল মনে হচ্ছিল। তাই অল্প খরচে এই সার তৈরির পদ্ধতি খুঁজতে থাকেন তিনি। অবশেষে ভিয়েতনাম পদ্ধতি ফলো করে কেঁচো সার তৈরি করে সাড়া ফেলেন এলাকাবাসীর মধ্যে।

টুক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ভিয়েতনাম পদ্ধতিতে কেঁচো সার তৈরি করে আমি খুব সহজেই লাভবান হয়েছি। এ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ কেঁচো সার ও কেঁচোর প্রোডাকশন পেয়েছি।

এ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, মাটিতে এক ফিট মতো গর্ত করে তার ওপর সাধারণ পলিথিন দেয়া হয়। পলিথিনের ওপর গোবর দিয়ে তার মধ্যে কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর পাটের বস্তা দিয়ে এটি ঢেকে এভাবেই রেখে দেয়া হয় ৬০ দিন।

এই পদ্ধতি খুব সাশ্রয়ী বলে জানান টুক্কু। বলেন, ‘আমি এই পদ্ধতিতে টনকে টন কেঁচো সার উৎপাদন করতে পারছি। আমার কেঁচো সারের কথা ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জসহ বাইরের জেলাতেও সাড়া ফেলেছে। কেঁচো সারের সবচেয়ে বড় উপকরণ গোবর। আমার নিজের গো-খামার এবং পাশে যারা গো-খামারি রয়েছেন তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ড্রাগন চাষি, ছাদ বাগানি ও সবজি চাষিরা আমার কাছ থেকে কেঁচো সার কেনেন। বর্তমানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কেঁচো সারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পাইকারি ১ কেজি কেঁচো সার ১৫ টাকা দরে ও ১ কেজি কেঁচো ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

টুক্কু বলেন, ‘এই সার বিক্রি করে আমি এরই মধ্যে ভালো টাকা আয় করেছি।’

তেঁতুলিয়া গ্রামের ড্রাগন চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর ড্রাগনের জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। আমি একই জমিতে বাধাকপি, ফুলকপি চাষে আবারও এই সার ব্যবহার করেছি। জমিতে আমার রাসায়নিক সারের ব্যবহার করতে হয়নি। এ বছর লেবু, পেঁপে ও মাল্টার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি ফলন ভালো পাব। আমার দেখাদেখি এখন অনেকেই কেঁচো সার ব্যবহার শুরু করেছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোস্তম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, সিরাজগঞ্জ নদী ভাঙনকবলিত এলাকা। এখানকার মাটি বেলে। কেঁচো সার ব্যবহারে মাটিতে পুষ্টি উপাদান যুক্ত হয়, বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ জৈব সার মাটিতে অণুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচো কম্পোস্টে প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকায় ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

উপকারিতা পাওয়ায় দিন দিন কেঁচো সারের চাহিদা উপজেলায় বাড়ছে জানিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, জেলায় টুক্কুর মতো আরও অনেক বেকার ছেলেরা এখন ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির খামার করছে। এভাবে খামার হলে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করি।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সারে ১.৫৭ শতাংশ নাইট্রোজেন, ২.৬০ শতাংশ পটাশ, ০.৬৬ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম, ১.২৬ শতাংশ ফসফরাস, ০.৭৪ শতাংশ সালফার ও .০৬ শতাংশ বোরন রয়েছে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধির জন্য যে কয়টি উপাদান দরকার, তার সবই এতে আছে।

তিনি আরও বলেন, 'টুক্কুর সঙ্গে একটি গ্রুপ তৈরি করে কেঁচো সার উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত কেঁচো সার পাইকারি বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের আরও কিছু রিং সরবরাহ করা হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।'

এ বিভাগের আরো খবর