বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালো রাস্তা সংস্কার, একই রাস্তায় দুই প্রকল্প

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:০৬

বানিয়ারভিটায় মাটির রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী হলেও সেখানে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা সড়ক সংস্কারের কাজ করছেন। শ্রমিকরা এ প্রকল্পের আওতায় মজুরি পাবেন। অথচ এটিকে ইতোমধ্যে দেখানো হয়েছে কাবিটার কাজ হিসেবে।

রাস্তা সংস্কারের একই কাজকে পৃথক দুই প্রকল্পে দেখানোর ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নে। সেখানে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির শ্রমিক দিয়ে রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আবার সেটিকেই কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়ারভিটা ওয়াহেদ পুলিশের বাড়ি থেকে ভুটামারী পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজে এ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান শফিউল আলম ও প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম এ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বানিয়ারভিটায় মাটির রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী হলেও সেখানে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা সড়ক সংস্কারের কাজ করছেন। শ্রমিকরা এ প্রকল্পের আওতায় মজুরি পাবেন। অথচ এটিকে ইতোমধ্যে দেখানো হয়েছে কাবিটার কাজ হিসেবে। রাস্তা সংস্কারের একটি কাজকেই পৃথক দুই প্রকল্পে দেখানো হচ্ছে।

প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক মজিবর রহমান, নুর হোসেন, মানিক, আবেদ আলী ও কাঞ্চন জানান, তারা সবাই কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ পেয়েছেন চেয়ারম্যানকে ৫০০ টাকা উৎকোচ দিয়ে। এখন শুনছেন এই মাটি কাটার রাস্তায় আবার কাবিটার কাজ হবে।

রাস্তার কাবিটা প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কাবিটার কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে ওই রাস্তায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজের আওতায় মাটির কাজ করা হচ্ছে।’ একই স্থানে দুই ধরনের প্রকল্পের কাজ কীভাবে হয়, জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাগেশ্বরী উপজেলার ৯ নম্বর ভিতরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ পুরনো। নতুন করে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে তিনি আপন ভাই, আত্মীয় ও সচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডে আপন ভাই রফিকুল ইসলামের কার্ড নং ১৭৭৯। তিনি প্রায় ৮ বিঘা জমির মালিক এবং তার নিজস্ব গভীর নলকূপ আছে। চেয়ারম্যানের ভাই বউ খোদেজা বেগমের কার্ড নং ১৭৯৩। চাচাতো ভাই ফকরুল ইসলাম ১৭৯৬ নং কার্ডধারী হলেও তিনি চাকরিজীবী। ভাতিজি রুজিনা খাতুনেরও কার্ড আছে।

এ ছাড়া তার আত্মীয় ফাতেমা বেগম, শরিফা বেগম, ইব্রাহীম আলী, মানিক মিয়া এবং আক্কাছ আলী কার্ড পেয়েছেন।

একইভাবে অনিয়মে জড়িয়েছেন ইউপি সদস্যরাও। সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ফাতেমা বেগম তার স্বামী গোলাম রসুলকে তালিকাভুক্ত করেছেন। তার কার্ড নং ১৮১৫। ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস আলী তার স্ত্রী নুরনাহার বেগমকে তালিকাভুক্ত করেছেন। নুরনাহার বেগমের কার্ড নং ১৯৭৪।

এই প্রকল্প এলাকার হতদরিদ্র আব্দুর রহমান, মাইদুল, মকছেদ আলী ও আব্দুল গফুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চেয়ারম্যান শফিউল আলম তাদের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কাজের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। ফলে তারা কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা আরও বলেন, একটি ভালো রাস্তায় নামমাত্র মাটি ফেলে সংস্কার দেখিয়ে সরকারের লাখ-লাখ টাকা অপচয় করা হচ্ছে।

১ নং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন, ‘১৮১৫ নং কার্ডধারী আমার স্বামী। গরিব, সে জন্য শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি।’৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ফেরদৌস আলী স্বীকার করেন, ১৯৭৪ নং কার্ডধারী নারী শ্রমিক তার স্ত্রী নুরনাহার বেগম। স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের বেতনের টাকা জোগাতে এ নাম দেয়া হয়েছে।

চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফির বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয় ইতিপূর্বে। ভোট গণনা করে ১১ এবং ২ ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়। নাগেশ্বরী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন এ ফলাফল ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসক চিঠির মাধ্যমে গৃহীত অনাস্থা প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রায় তিন মাস আগে চিঠি পাঠালেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘সব নিয়ম মেনেই ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফায় কাজ চলছে। প্রতি জন শ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পাবেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এ ছাড়া অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।

‘একটি পক্ষ আমাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে ষড়যন্ত্র করে আসছে। ব্যর্থ হয়ে আবারও অভিযোগ করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘৬০ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের শ্রমিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ নেই। এ কারণে অভিযোগকারীরা তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। যাদের আমার আত্মীয় বলা হয়েছে, তারা সবাই গরিব।’

কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মিনহাজুল ইসলাম (উপসচিব) অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘রোববার নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলমের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের রিপোর্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়াধীন আছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলমের বিরুদ্ধে গত ঈদুল আজহায় তালিকাভুক্ত দুই হাজারের বেশি দুস্থ মানুষকে ভিজিএফের চাল না দিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সেই তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ, একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার রাখা, একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে কার্ড প্রদানসহ সচ্ছল ব্যক্তিদের ভিজিএফ বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ ওঠে।

এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ অভিযোগপত্র পেয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।

এ বিভাগের আরো খবর