একাদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে জয়জয়কারেও উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের দখল পায়নি আওয়ামী লীগ। তিনটি আসনের দুটিই পায় বিএনপি। সংসদ থেকে দলটির পদত্যাগের সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দলের সামনে এসেছে আবার সেই সুযোগ।
বিএনপি ছাড়াও এই জেলায় শক্তিশালী জামায়াতে ইসলামী। তবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা এই দলটিও থাকছে না উপনির্বাচনে। ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় সংসদ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান এখানে তলানিতে। ফলে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো আসলে কেউ নেই সেখানে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট) আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম এরই মধ্যে করেছেন পদত্যাগ। শূন্য ঘোষিত আসনে ভোটের তারিখ ঠিক হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি।
শূন্য হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনও। এখান থেকে বিজয়ী বিএনপি নেতা মো. হারুনুর রশীদ দেশে ফিরেই দেবেন পদত্যাগপত্র। সেখানেও ভোট সময়ের ব্যাপার মাত্র।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর। ফাইল ছবি
সহজ জয়ের আশায় লড়াইটা এখন আওয়ামী লীগের ভেতরে। মনোনয়নের জন্য শুরু হয়েছে তোড়জোড়, শীতে চাঙা হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে এই উপনির্বাচন সংগঠনকে ঝাঁকুনি দেবে। দলীয় সংসদ সদস্য থাকলে উন্নয়ন হবে দ্রুত, এতে আগামী নির্বাচনে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। আর ভোটকে ঘিরে সংগঠিত হবে সংগঠন।
১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ল্যাসিক উদাহরণ হতে পারে এই জেলা। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জেলার দুটি আসনে পাত্তাই পাননি দলের প্রার্থীরা। তৃতীয় বা চতুর্থ হয়ে সমর্থকদের করেছেন হতাশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনেই নৌকার প্রার্থী লড়াই করতে পেরেছেন কিছুটা।
অন্য দুটি আসনে লড়াই জমত বিএনপি ও জামায়াতে। ২০০১ সালে দুই দলে জোট হলেও এই জেলায় মিল হয়নি তাদের। জেলার দুটি আসন থাকে উন্মুক্ত।
১৯৯১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ বা সদর আসন পায় জামায়াত। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে হারিয়ে জয় পায় বিএনপি। তবে ২০০৮ সালে চমক দেখায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি থেকে আসা আবদুল ওদুদ করেন বাজিমাত। ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো জয় পান নৌকার প্রার্থী।
একই অবস্থা শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১) আসনে। সেটিও ২০০৮ সালে দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনেও থাকে সাফল্য।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে তিনবার দ্বিতীয় হওয়ার পর ২০০৮ সালে বাজিমাত আওয়ামী লীগের। তবে ২০১৮ সালে ফের হোঁচট।
১ ফেব্রুয়ারি ভোট হচ্ছে এই আসনটিতেই। আর হারুন ফিরে পদত্যাগ করলে সদর আসনে।
এর মধ্যে সদর আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি না। ২০০৮-এর বিজয়ী ওদুদ ছাড়া শোনা যাচ্ছে না কারও নাম।
তবে পরিস্থিতি ভিন্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে। সেখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের বিলবোর্ড উঠছে শহরে-বন্দরে। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে প্রচার।
সাবেক দুই সংসদ সদস্য, ঢাকায় থাকা দলের বেশ কয়েকজন নেতা ও যুবলীগের এক নেতাও তৎপর মনোনয়ন পেতে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মু. জিয়াউর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, ভোলাহাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা খুরশিদ আলম বাচ্চু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সৈকত জোয়াদ্দার, একই সংগঠনের নেতা কামরুল হাসান লিংকনও আছেন মনোনয়ন দৌড়ে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে উপনির্বাচনের বিষয়টি সামনে এসেছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই চেষ্টা করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। যদি আসনটি শূন্য হয়, তাহলে উপনির্বাচন হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী ওদুদ। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে এমপি ছিলাম, গত চার বছরে হারুন সাহেব তেমন কিছুই করতে পারেননি। অনেক উন্নয়ন প্রকল্পই থমকে গেছে। আগামী এ সময়ে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে, গত চার বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে তুলতে পারব। সেই সঙ্গে দলকে আরো সংগঠিত করা সহজ হবে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তার পরও বলব, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, সেটায় আমরা মাথা পেতে নেব।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেব।’
আগ্রহ নেই অন্য দলের
বিএনপি-জামায়াত এই উপনির্বাচনে অংশ নেবে না, এট নিশ্চিত। থাকতে পারে জাতীয় পার্টি। তবে দলের জেলা শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম সোনা ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলীর মৃত্যুর পর অনেকটায় নেতৃত্বশূন্য দল। এর বাইরে আছে আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ। অন্য দলগুলো শক্তি বা আগ্রহ, নেই কোনোটাই।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘উপনির্বাচনের বিষয়ে আমাদের এখনো দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে নেতা-কর্মীদের বিষয়ে এ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহও নেই। তার পরও দল থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হলে সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।’