দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষকে উন্নত জীবন দিতে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, তিনি ও তার পরিবার এমন কিছু করেন না, যার কারণে দেশের মানুষের মাথা নিচু হয়।
রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। সেই হারানোর বেদনাকে সম্বল করেই কিন্তু এ দেশে এসেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য। এখানে দুর্নীতি করে পয়সা বানাব, নিজের জীবনমান নিয়ে থাকব, এটার জন্য তো আসিনি।’
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ এবং পরবর্তী সময়ে তা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি বাংলাদেশের মানুষের মাথা নিচু হোক, মুখ ছোট হোক, বাংলাদেশ কোথাও লজ্জায় পড়ুক, অন্তত আমি বা আমার পরিবার, আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করিনি, করব না। এ দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।’
তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ফেডারেল কোর্ট কানাডা, রায় দিয়েছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সমস্ত অভিযোগ ভুয়া এবং মিথ্যা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দেশে আইনের শাসন হবে, মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে। বাংলাদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।’
কেউ যেন বিচারহীনতায় কষ্ট না পায়
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই, আমাদের মতো কেউ যেন আর বিচারহীনতায় কষ্ট না পায়। বাবা-মা, ভাই-বোন মারা গেল আর আমরা বিচার চাইতে পারব না। আবার তাদেরকেই গণতন্ত্রের ধারক-বাহক বলা হয়। এটা সত্যিই জাতির জন্য, দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই রকম অবস্থায় যেন বাংলাদেশ আর কোনোদিন না পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এইটুকুই বলব যে, আমাদের আইনজীবীগণ, তারাও অপরিহার্য আমাদের জন্য। কাজেই আইনজীবীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে তারা যেন তাদের মেধা, প্রতিভা, সততা, আন্তরিকতা দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন।’
আদালতের স্বাধীনতা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব সময় প্রচেষ্টা ছিল যে সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। তাই তার আর্থিক ব্যবস্থাপনা আগে ছিল সরকারপ্রধানের হাতে। সেটা কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাতে দিয়ে দিই। ‘আলাদা বাজেট বরাদ্দ দেই। সেই সঙ্গে আমাদের বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ সেটাও আমরা কার্যকর করে নীতিমালা প্রণয়ণের ব্যবস্থা করি। স্থায়ী আইন কমিশন গঠন করি।’
একটা আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটা আইন বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব অনেকে দিয়েছেন। আমার মনে হয় সেটাও আমরা করে দেব। এটা একান্তভাবে সকলের জন্য দরকার।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুকেশ কুমার রাসিক ভাই শাহ, বাংলাদেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের বিচারক ওবায়দুল হাসান।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার বিকেলে বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট: ৫০ বছরের পথচলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
অনুষ্ঠানে ছয়টি ক্যাটাগরিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা তথা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ দেয়া হয়।
জেলা ও দায়রা জজদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুন্নেছা, অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাউদ হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে নওগাঁর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ খোরশেদ আলম, সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ রেশমা খাতুন এবং সহকারী জজ শাখায় রংপুরের সহকারী জজ হাসিনুর রহমান মিলন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পান স্বর্ণপদক।
আর দলগতভাবে পদক পাওয়া জেলা হলো ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ। এ জেলার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ হেলাল উদ্দিন পদক গ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগতভাবে পদক পাওয়া প্রত্যেককে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং ২ লাখ টাকার চেক এবং ময়মনসিংহ জেলাকে ২২ ক্যারেট ১৬ গ্রাম স্বর্ণের পদক এবং ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর একটি ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ টাকার একটি স্মারক নোট অবমুক্ত করেন।