বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুমিল্লায় বছরে প্রতারণার শিকার ৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:১৯

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, কুমিল্লায় পাসপোর্ট তৈরি থেকে বিদেশ যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতারণার শিকার প্রবাসীরা বেশিরভাগ সময় চুপ থাকেন। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন না বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী।

কুমিল্লায় কোনো না কোনো পর্যায়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে জানিয়ে কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস বলেছে, জেলায় প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার মানুষ ফাঁদে পড়ছেন প্রতারকদের।

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ নিউজবাংলাকে জানান, প্রতি বছর কুমিল্লা থেকে গড়ে ৭০ হাজার মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যান। এর মধ্যে অন্তত ৫ হাজার জন প্রতারণার শিকার হন।

তিনি জানান, শুধু প্রবাসে যাওয়া নিয়েই নয়, এর আগে পাসপোর্ট পেতে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। পাসপোর্ট তৈরি থেকে বিদেশ যাওয়া এবং দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রতারকদের ফাঁদে পড়লেও বেশিরভাগ সময় চুপ থাকেন তারা।

দেবব্রত আরও জানান, দালাল ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন না বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী।

দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে না চাওয়ায় চলতি বছর কুমিল্লার তিন সেবাগ্রহীতাকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক পেটান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

কী বলছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

কুমিল্লা নগরীর চর্থা এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া জানান, ভিসা, মেডিক্যাল, বিমানের টিকিটসহ ৫ লাখ তুলে দেন চান্দিনা উপজেলার বাবুল মিয়ার হাতে। বাবুল মিয়ার জামাতা ওমানে লোক নেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় সহজেই বিশ্বাস করে এই লেনদেন করেন তিনি। পরে নির্দিষ্ট দিনে তিনি রওনা দেন।

আরমান আরও জানান, ওমানের মাসকাট বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয় পুলিশ। জাল ভিসার কারণে ফেরত আসেন তিনি। গত এক বছর আগে ঘটে যাওয়া এই প্রতারণার ঘানি টানছে তার পরিবার।কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে পাসপোর্ট তৈরি করতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দালাল ছাড়া যদি পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তাহলে আপনার আবেদন ফরমে শুধু ভুল থাকবে। দালালের মাধ্যমে যদি বেশি টাকা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেন, তাহলে ভুল হলেও সমস্যা নেই।

‘তা না হলে দিনের পর দিন এসে ধরনা দিলেও কাজ হবে না। তাই অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করে সময়মতো পাসপোর্ট পেয়েছি।’

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৯ বিদেশগামী কর্মীর নিবন্ধন হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩৫ পুরুষ ও ১১ হাজার ১৬৪ নারী রয়েছেন। কেন প্রতারণার শিকার প্রবাসীরা

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, যারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আত্মীয়-স্বজন ও দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যাচ্ছেন। কথা রাখছেন না সেই আত্মীয় ও দালালরা। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন তারা।কুমিল্লা র‌্যাব-১১-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ‘গত দেড় বছরে আমরা শত শত পাসপোর্টসহ অনেক দালালকে গ্রেপ্তার করেছি।আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এই দালালরা জেল থেকে বের হয়ে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নানানভাবে প্রতারণা করে, তবে র‌্যাবও এসব দালালদের গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।

‘শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব না। সেখানে অবশ্যই সবার সচেতনতা প্রয়োজন।’প্রবাসীদের রক্ষায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জনশক্তি অফিস কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে ৭০টি কর্মশালা, ৪৫টি হাট-বাজারে এবং ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা, নারীদের অংশগ্রহণে ২০টি উঠান বৈঠক করা হয়।

তিনি বলেন, কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলমান প্রাক-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে আনুমানিক ৩৫ হাজার বিদেশগামীদের মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনাবিষয়ক তথ্য প্রচার করা হয়।

সচেতন নাগরিকদের ভাষ্য

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘প্রতারণা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বাঁচাতে সরকারের ওইসব রিক্রুট এজেন্সিগুলোকে একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত, যাদের লাইসেন্স নাই অথবা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

‘এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বৈধভাবে প্রবাসে যাওয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। পাশাপাশি জেলা সদরের কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি অফিস ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে অফিস তৈরি করতে হবে।’মানবাধিকার সংগঠক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘শুধু প্রতারণা ঠেকানো নয়, প্রবাসীরা যখন কর্মরত অবস্থায় মারা যান, তখন তাদের মরদেহ দেশে আনা এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়। অফিসে অফিসে ধরনা দিতে হয় প্রবাসে মৃত্যুবরণ করা দেশের স্বজনদের। যদি দুর্ঘটনায় কোনো প্রবাসী মারা যান সে ক্ষেত্রে জনশক্তি অফিস থেকে লোকজন গিয়ে মারা যাওয়া প্রবাসীর বাড়ি থেকে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর পর আর্থিক অনুদানের চেকগুলো স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসা উচিত। এতে করে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার প্রতি সম্মানও জানানো হবে। পাশাপাশি ভোগান্তিও কমবে।

‘কারণ একজন মানুষ পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাসে গেলে তার নাগরিকত্ব শেষ হয়ে যায় না। নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন প্রবাসীরাও।’

এ বিভাগের আরো খবর