দ্রুত বর্ধনশীল গাছ ইউক্যালিপটাস, যার কাঠের চাহিদা ব্যাপক। গাছটি মাটির অনেক গভীর থেকে শিকড় দিয়ে পানি সংগ্রহ করে, যাতে করে পানির স্তর নেমে যায়।
খরাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলে পানির স্তর নেমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই লাভের আশায় অনেকেই গাছটি লাগাচ্ছেন। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন পরিবেশবিদরা।
বন বিভাগ তাদের আওতাধীন জমি ও সামাজিক বনায়নে ইউক্যালিপটাসের চারা রোপণ বন্ধ করলেও অনেকে বাগান আকারে অথবা জমির আইলে এ গাছ রোপণ করে চলছেন।
আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রি করে পাওয়া যায় ১০ হাজার বা তারও বেশি টাকা।
এক বিঘা জমির আইলে ২০০ গাছ লাগালে ১০ বছর পর ২০ লাখ টাকার গাছ বিক্রয় করা যায়, যা ফসল উৎপাদন থেকে আসে না। তাই জমির কিছুটা ক্ষতি হলেও মানুষজন প্রতি বছরই ইউক্যালিপটাস গাছের চারা লাগিয়ে চলছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৯ বছর আগে দুই বিঘা উঁচু জমির আইলে ১০০টি ইউক্যালিপটাসের চারা লাগিয়েছিলাম। কিছু চারা মরে যায় এবং কিছু গরু-ছাগল নষ্ট করে। বড় হয় ৭০টি চারা।
‘কিছুদিন আগে ৫০টি ইউক্যালিপটাস বিক্রয় করেছি সাড়ে চার লাখ টাকায়। বাকি গাছ লাখ দেড়েক টাকায় বিক্রি করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গাছ বিক্রি সহজ। গাছ যত বড় হবে, দাম তত বেশি। জেলার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে উচ্চ মূল্যে এই গাছ কিনে নিয়ে যায়।’
পঞ্চগড়ে নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সরকার হায়দার বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যে জমিতে এই গাছ লাগানো হয়, সেই জমির ফসল উৎপাদনক্ষমতা অনেক কমে যায়।
‘বিশেষ করে গাছের চারপাশে ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত জমির ফসল মরে যায় অথবা আশঙ্কাজনকভাবে কম হয়। এই গাছের পাশে অন্য গাছও হয় না। হলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।’
ভজনপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও পরিবেশবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাছ এবং নদী প্রকৃতির অলংকার। ইউক্যালিপটাস রোপণ বন্ধ করতে আইন করতে হবে। এটা করতে না পারলে পঞ্চগড়ের প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
পঞ্চগড় পাথরাজ ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান পরিবেশবিদ আলতাফ হোসেন বলেন, পঞ্চগড়সহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মাটি বেলে দো-আঁশ। এসব এলাকার মাটিতে বালির আধিক্য থাকায় পানির ধারণক্ষমতা এমনিতেই কম। সরকার ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে আগামী দিনে উত্তরের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে।