নীলফামারীর ডিমলায় বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার খনন কেন্দ্র করে এলাবাসীর বাধার মুখে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিনটি মোটরসাইকেল, এস্কাভেটর ও ড্রেজার মেশিন।
শনিবার দুপুরের দিকে ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জে অবস্থিত সেচ প্রকল্পটির রিজার্ভার এলাকার কুঠিরডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আর খবর পেয়ে ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এলাকাবাসী জানান, বুড়িতিস্তা নদীর ওপর সেচ প্রকল্পটি নেয়া হয় ১৯৬৮ সালে। এর আওতায় তখন কালিগঞ্জ নামক স্থানে তিনশ’ ফুটের একটি ব্যারাজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে সময় পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার ৩০০ একর জমিতে জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
পরবর্তীতে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জলাধারের ওই পরিমাণ জমি সরকার অধিগ্রহণ করেনি। পাঁচটি গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে মালিকানার এসব জমি নিজ দখলে রেখে কৃষিকাজ করে আসছেন।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা নিলে এলাকার কৃষকরা আদালতে পাঁচটি মামলা করেন। সেসব মামলা বিচারাধীন। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে পাউবো প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেয়।
কুঠিরডাঙ্গা গ্রামের এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ‘জলাধার নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানটি পুরোটাই কৃষি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে ওই জমি তাদের বলে দাবি করছে।
‘শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সীমানা নির্ধারণ করতে এলে কেউ বাধা দেয়নি। বরং পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের লোকজন এলাকাবাসীকে ধাওয়া করে হামলা চালায়।’
নীলফামারী পাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় পাঁচটি গ্রামের এক হাজার ২১৭ দশমিক ৬১ একরের মধ্যে বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভার রয়েছে। গ্রামগুলো হলো- ডিমলা উপজেলার পচারহাট, রামডাংগা ও কুঠিরডাংগা এবং জলঢাকা উপজেলার খারিজা গোলনা ও চিড়াভিজা গোলনা।
ওই পরিমাণ জমির মধ্যে সম্প্রতি ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি প্যাকেজে ৬৬০ একর জমিতে রিজার্ভার (জলাধার) খননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। বর্তমানে জমির সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। সরেজমিনে সার্ভে করে রিজার্ভারের সীমানা নির্ধারণ করার পর সেটি অনুমোদন সাপেক্ষে খনন কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ রয়েছে।
এ বিষয়ে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল সরকার বলেন, ‘আমরা সেখানে জলাধার খননের জন্য যাইনি। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শনিবার ওই জমির সীমানা নির্ধারণের কথা ছিল। এজন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়। সেখানে আমরা উপস্থিত হলে এলাকার লোকজন অর্তকিত বাধা সৃষ্টি করে হামলা চালায়। এখানে সরকারি সম্পত্তি দখল করে রাখা ব্যক্তিরাই বাধার সৃষ্টি করেছেন।’
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন, ‘শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে সীমানা নির্ধারণ করতে গেলে এলাকাবাসী অতর্কিত হামলা চালায়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’