বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অষ্টম শ্রেণি পাসে ডাক্তার

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:৫২

শরিফুল ইসলাম প্রায় ৮ বছর ধরে সব রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। আরএমপি (রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার) কোর্সও করেননি। তারপরও এমবিবিএস চিকিৎসকের মতোই করছেন জটিল সব রোগের চিকিৎসা।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভাটকৈ বাজারে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন অষ্টম শ্রেণি পাস করা ‘ডাক্তার’। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিনি চিকিৎসার নামে এই অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে রোগ নিরাময়ের বদলে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

৪৫ বছর বয়সী শরিফুল ইসলাম আরএমপি (রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার) কোর্সও করেননি। তারপরও এমবিবিএস চিকিৎসকের মতোই করছেন জটিল সব রোগের চিকিৎসা।

সরেজমিনে জানা যায়, রাণীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়নের ভাটকৈ বাজারে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি রোগী দেখেন শরিফুল ইসলাম। নাক-কান-গলা, কিডনি, ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বাতের ব্যথা- এমন কোনো রোগ নেই যার চিকিৎসা তার কাছে নেই।

আগত রোগীদের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেন ব্যবস্থাপত্র। অধিকাংশ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেন হাই-পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক। আবার অনেক সময় পুশ করেন হাই-পাওয়ারের ব্যথানাশক ইনজেকশন। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীরা সুফল পেলেও পরবর্তীতে শরীরে দেখা দেয় নানা জটিল সমস্যা।

স্থানীয় শফিকপুর গ্রামের জালাল হোসেন বলেন, ‘ছয় মাস আগে শরিফুল ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম পায়ের চিকিৎসার জন্য। পা নিয়ে ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলাম না। ডাক্তার বলে যে, পায়ের শক্তি কমে গেছে। তারপর কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়েছিল। সেগুলো খাওয়ার পর আমি আর হাঁটতেই পারছিলাম না।

’এক মাস পর নওগাঁ শহরে এক ডাক্তারকে দেখাইছিলাম। সেই ডাক্তার বলেছিলেন, ভুল চিকিৎসা করা হয়েছিল। আর কিছুদিন হলে আমি পঙ্গু হয়ে যেতাম। শরিফুল কোনো ডাক্তারই নয়। তার শাস্তি হওয়া উচিত।’

দামুয়া গ্রামের সোয়ারব আলী নামের এক কৃষক বলেন, ‘গলার সমস্যা নিয়ে চলতি বছরের ৩ জুন তার কাছে গিয়েছিলাম। গলা খুব ব্যথা করত। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই আমাকে ৪টি ওষুধ লিখে দিয়েছিল সাদা কাগজে। আবার তার কাছ থেকেই ওষুধগুলো কিনতে হয়েছিল ৮০০ টাকা দিয়ে। ভিজিট নিয়েছিল ৫০ টাকা।

‘কিছুদিন পর গলা ব্যথা ভালো হওয়ার চেয়ে আরো বেড়ে গিয়েছিল। কোনো উপায় না পেয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এক ডাক্তারকে দেখিয়ে বর্তমানে সুস্থ আছি। আমাদেরই ভুল তার কাছে যাওয়া। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার।’

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এসএসসি পাস করেছি। এরপর থেকে প্রায় ৮ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অনেকের জটিল রোগ আমি চিকিৎসা দিয়ে ভালো করছি। যার কারণে অনেকে আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। আর হাই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিলে দ্রুত রোগ সারে। এ কারণে সেটা দেয়া হয়। তবে সবাইকে দেয়া হয় না।’

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও আরএমপি কোর্সের কাগজপত্র আছে কিনা, আর নামযুক্ত কোনো নির্ধারিত প্যাড নেই কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ওসব কিছু নেই। পরে আসুন, সব দেখাব। আর আমার নির্ধারিত প্যাডের দরকার হয় না। কারণ আমার কাছে মোটামুটি সব ধরনের ওষুধ থাকে।’

আপনি যদি পল্লী চিকিৎসকও হয়ে থাকেন তাহলেও তো সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন না বা চিকিৎসা করার নিয়ম নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা করার নিয়ম। এছাড়া বেশ কয়েকজন রোগী আপনার কাছে চিকিৎসা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন।- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব ডাক্তারের চিকিৎসায়ই একটু-আধটু ভুল হতে পারে। আর ওষুধও বিক্রি করে থাকি। তার কাগজপত্র আছে। কিন্তু আপনাকে দেখানোর প্রয়োজন মনে করছি না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন এ বিষয়ে বলেন, ‘অতি দ্রুতই চিকিৎসা বিভাগের কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই চিকিৎসকের চিকিৎসালয় পরিদর্শন করা হবে। তিনি যদি ডাক্তারি নিয়ম বর্হিভূত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সিভিল সার্জন আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান জানান, ‘সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ব্যথার ইনজেকশন ও ওষুধ দিতে পারেন না। আর পল্লী চিকিৎসকরা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওষুধ বিক্রি করতে পারেন। তা-ও প্রয়োজনীয় অনুমতির ছাড়পত্র নিয়ে। খোঁজখবর নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর