বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৩০ ডিসেম্বর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাত দলের রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, “আমরা এর আগে ১২ ডিসেম্বর শিশু কল্যাণ অধিকার পরিষদের অডিটরিয়ামে আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম। সেখানে আমরা বলেছিলাম, মানুষের মধ্যে যে আন্দোলনে দানা বেঁধেছে, সেটা সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আপনাদের মাঝে ব্যক্ত করেছিলাম।
“ইতোমধ্যে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে, আপনারা জানেন। বিএনপি আমাদের কাছে জিজ্ঞেসা করেছিল। কারণ আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্য আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও মতবিনিময় করছি। ওনারা আমাদের জানিয়েছিলেন এই পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে। আমরা সবাই জানিয়েছিলাম, ‘তুমি অধম বলে কি আমি উত্তম হব না?’ আমরা তারিখ পেছাই।”
মান্না বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর আর একটা কালোদিন। কালোদিন নয় শুধু, রাতও। দিন-রাত মিলিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের জন্য একটা কলঙ্ক। এই দিন আমরা পালন করি। তার সঙ্গে চলমান যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দাবি, তা যুক্ত করি।
‘এ ব্যাপারে তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে। এটা ঘোষণা করার জন্যই আজকে আমরা এই সংবাদ সম্মেলন করছি।’
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, যাতে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ৩০ ডিসেম্বর কর্মসূচি পালন করেছে।
কর্মসূচির বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বলেন, ‘৩০ তারিখ দেশব্যাপী গণমিছিল, গণবিক্ষোভ হবে। এটা আপনার জানলেন। আমরা ছাড়াও দুই-একটি বা অনেকগুলো দল ঘোষণা করবে। একই সঙ্গে একই রকম দাবিতে সেদিন তারা পালন করবে। এটার মধ্যে এক ধরনের যুগপততা আছে তো।’
তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সমাবেশ শুরু হবে। এরপর আমরা মিছিল নিয়ে আগাব।’
গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ কেবল এক দফা আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলনের শীর্ষবিন্দু হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করা, দেশে নির্বাচনের মাঠ তৈরি করা এবং একই সঙ্গে সামগ্রিক রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। এটাই আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি। আমরা এই ব্যাপারে আলোচনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকে আঙুল তুলে কোনো কথা বলা যাবে না। একই ঘোষণা অনেকগুলো দল থেকে আসবে। কালোদিনের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আন্দোলন করব। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা আগেই বলেছি। এর সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ আরও যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দাবি করব।’
যুগপৎ আন্দোলন কি না
সংবাদ সম্মেলন শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির কাছে জানতে চাওয়া হয় বিএনপির সঙ্গে তারা যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছেন কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘যুগপৎ মানে তো এটাই যে আমরা আমাদের জায়গা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, বিএনপি তাদের জায়গা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। যুগপৎ মানেই কিন্তু আলাদা আলাদা কর্মসূচি।
‘একই দিনে এই কর্মসূচি ঘোষণা মানেই যুগপৎ। মঞ্চ আলাদা হবে, তবে আমাদের কর্মসূচি একই দিনে আমরা পালন করব।’
বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানে যুগপৎ শব্দের অর্থ করা হয়েছে একই কালে বা একই সময়ে।