বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপির ছাড়া আসনে আওয়ামী লীগের ছাড়ের আশায় জাপা

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৪৫

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেছেন, তার ধারণা, দুটি আসন তারা পেতে পারেন। বাড়লে একটি বাড়তে পারে। অন্য একজন নেতা বলেছেন, তিনটি থেকে চারটির কথা। তবে জোর দিয়ে বলেছেন দুটি পাওয়ার কথা।

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করার পর আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দুই থেকে তিনটি আসনে ছাড় আশা করছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, যদিও তারা সব আসনেই এককভাবে লড়াই করার কথা বলছেন।

এই সাতটি আসনের মধ্যে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর- তিনটি জাতীয় নির্বাচনেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

বগুড়া-৬ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ লড়াই করলেও পরের দুটি নির্বাচনে তা ছেড়ে দেয়া হয় জাতীয় পার্টিকে।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগে জাতীয় পার্টি, জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে জোট করে বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতিই পাল্টে দেয় বিএনপি। ভোটের আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোট ছেড়ে বের হয়ে গেলেও তার দলের একটি অংশ বিজেপি নামে রয়ে যায় জোটে।

২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে পাল্টা চাল হিসেবে এরশাদকে জোটে নেয় আওয়ামী লীগ, সঙ্গে জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, এলডিপিসহ আরও কিছু দল। সেই নির্বাচন অবশ্য আর হয়নি।

প্রায় দুই বছরের জরুরি অবস্থা শেষে ২০০৮ সালের শেষে যে ভোট হয়, তাতে মহাজোট থেকে বাদ পড়ে এলডিপি, গণফোরাম। তবে আওয়ামী লীগের মূল শরিক হয় জাতীয় পার্টি। এই সম্মিলিত শক্তিতে বিএনপির জোট বলতে গেলে উড়ে যায়। এরপর নির্বাচনে প্রভাবকের ভূমিকায় এখনও ফিরতে পারেনি তারা।

নির্বাচনকালে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবের পর শেখ হাসিনা ও এইচ এম এরশাদের বৈঠক। ছবি: পিআইডি

নবম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি বহুবার এককভাবে নির্বাচনের কথা বলছে। তবে ভোটের শেষে মহাজোট থেকে বের হয়ে এলেও পরের দুইবার আবার ভোটের আগে হয়েছে সমঝোতা।

গত কয়েক মাস ধরে জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে এলেও এই উপনির্বাচনের আগে আগে আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের মধ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একসঙ্গে গিয়ে দেখা করে আসেন জি এম কাদের ও বেগম রওশন এরশাদ। এতে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়। একটি হলো জাতীয় পার্টি আসলে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে, দ্বিতীয়ত দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধটিও মীমাংসার পর্যায়ে।

জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও দলের নেতারা নিশ্চিত করেছেন, এই বৈঠকে বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচনে ছাড় চেয়েছেন তারা। তবে কয়টি আসনে তা চাওয়া হয়েছে, সে নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রোববার সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির এমপিরা। ছবি: নিউজবাংলা

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেছেন, তার ধারণা, দুটি আসন তারা পেতে পারেন। বাড়লে একটি বাড়তে পারে।

অন্য একজন নেতা বলেছেন, তিনটি থেকে চারটির কথা। তবে জোর দিয়ে বলেছেন দুটি পাওয়ার কথা।

গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে তাদের সাতজন সংসদ সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা আসে। পরের দিন ছয়জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন স্পিকারের কাছে। একজন দেশের বাইরে থাকায় তিনি জমা দিতে পারেননি।

এরই মধ্যে ছয়টি আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে ভোট কবে, তা জানিয়ে রোববার ঘোষণা হবে তফসিল। আর এর আগে সরকারবিরোধী অবস্থান ভুলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় আদায়ের চেষ্টায় জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের আসনের অভাব নেই। কাজেই তারা উপনির্বাচনে বেশি আসনে ছাড় পাওয়ার আশা করতেই পারেন।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠককে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে সংসদ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছিলেন। আর জি এম কাদের যেহেতু উপনেতা, আবার উনার দেবরও, তাই একসঙ্গে দেখা করতে গেছেন।’

তবে দলের প্রেসিডিয়াম এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে স্বীকার করেন, উপনির্বাচনে আসন ছাড় নিয়েও কথা হয়েছে সেই সাক্ষাতে।

কয়টি আসন আপনারা প্রত্যাশা করছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না যে আওয়ামী লীগ বিএনপির সব আসন ছেড়ে দেবে। সর্বোচ্চ ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২, বগুড়া-৬ ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসন ছেড়ে দিতে পারে। এই বাইরে কোনোটা ছেড়ে দেবে না।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের আরেক সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ১৯ ডিসেম্বর দলের কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পর বলা যাবে, আসলে দল কী করবে, কয়টা আসনে নির্বাচন করবে।’

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এখন কোনো সমীকরণ এখন নেই। জাতীয় পার্টি নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নির্বাচন করবে।’

বর্তমানে সংসদে জাতীয় পার্টির ২৬ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ২২ জন নির্বাচিত, ৪ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য।

বিএনপি কোন আসনে কাকে হারিয়ে জিতেছিল

গত জাতীয় নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, ঠাকুরগাঁও-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয় পায় বিএনপি। সংসদে আনুপাতিক হারে আসনের ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় তারা।

এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ হারুনুর রশীদ বিদেশে থাকায় পদত্যাগপত্র দিতে পারেননি। তাই তাঁর আসনটি শূন্য হয়নি।

এর মধ্যে বগুড়া-৬ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতারা। বগুড়া-৪ নিয়েও দাবি ছিল জাতীয় পার্টির। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে দলটির দাবির মুখে আসনটি উন্মুক্ত রাখা হয়। জাসদের রেজাউল করিম তানসেনের কাছে জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন বাচ্চু হেরে যান।

সেই হিসাবে উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টি ছাড় দেয়ার জোরালো দাবি জানাবে আওয়ামী লীগের কাছে। বগুড়া-৪ নিয়েও দাবি থাকবে তাদের। তবে তাদের চোখ আছে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনেও।

চার বছর আগের জাতীয় নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ মহাজোটকে হারাতে হয় জোটের মধ্যে ঐক্য না থাকায়। আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিলেও সেখানকার এক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র পার্থী হয়ে লড়াই করে অল্প ভোটে হেরে যান। মহাজোটের ভোট ভাগাভাগিতে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনে জয় পায় বিএনপি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসনেও আওয়ামী লীগকে হারিয়ে জয় পান বিএনপির নেতারা। সেখানে জাতীয় পার্টির ভালো ভোট নেই, আবার পরিচিত মুখও নেই। ফলে এই দুটি আসনে উপনির্বাচনে দলের তেমন মাথাব্যথাও নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ নিয়ে জটিলতা

এই আসনে গত নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। তবে ভোট পান ২৭৯টি। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করে আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন মঈন ভোট পান ৭৮ হাজারের বেশি। হারেন হাজার আটেক ভোটে।

আগের দুটি নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়নে এই আসন থেকে জেতেন জাতীয় পার্টির জিয়াউল হক মৃধা, জেতেনও তিনি। কিন্তু গত নির্বাচনে দল তাকে প্রতীক দেবে না বলে জানায়।

স্বতন্ত্র হয়ে ভোটে নামেন মৃধাও। ভোট পান ৩৯ হাজার। তাকে বহিষ্কার করার পর চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পদ নিয়ে করেছেন মামলা।

তার পরও মৃধা লাঙ্গল নিয়েই সেই আসনে ভোট করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমি লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করব।’

সেটি কীভাবে? জানতে চাইলে বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির সর্বেসর্বা। উনি টিকিট দেবেন, আমরা নির্বাচন করব।’

জি এম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু রওশন তো চেয়ারম্যান নন। তাহলে কীভাবে এত আত্মবিশ্বাসী- এমন প্রশ্নে মৃধা বললেন, ‘আমি ওভার কনফার্ম।’

এ বিভাগের আরো খবর