বিজয় দিবসে একই মঞ্চে হাজারো কণ্ঠে পরিবেশন হলো দেশের গান। এর নাম রাখা হয় ‘হাজারো কণ্ঠে দেশগান।’
ছায়ানটের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুক্রবার বিকেলে হয় এ অনুষ্ঠান।
মুক্তকণ্ঠে দেশের গান ছাড়াও ছিল দেশকথা শোনা, বলা এবং ‘সবাই মিলে নৃত্যশৈলী’র আয়োজন। পুরো আয়োজন জুড়ে প্রতীকীভাবে জাতীয় পতাকার রঙ দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
গৌতম সরকার ও স্বরূপ হোসেনের তবলা, শিবু দাসের ঢোল ও প্রদীপ কুমার রায়ের মন্দিরার দ্যোতনায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও বাঙালির পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের ক্ষণকে স্মরণ করে সম্মিলিত কণ্ঠে ৪টা ৩১ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
রবিন্স চৌধুরীর কিবোর্ডে ও রতন কুমারের দোতরায় এবারের আয়োজনে পরিবেশিত হয় আটটি সম্মেলক গান, সাথে সম্মেলক নৃত্য। সঙ্গে ছিল একক পরিবেশনাও।
নৃত্যগীত পর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘এখন আর দেরি নয়’; জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সঙ্ঘ শরণ তীর্থযাত্রা’ ও ‘চল্ চল্ চল্’ সঙ্গীতে সম্মিলিত নৃত্যগীত পরিবেশন করে ছায়ানটের শিল্পীরা।
সুরকার শ্যামল মিত্র ও গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ’, মোঃ মোশাদ আলীর ‘বলো বলোরে বলো সবে’; আবদুল লতিফের ‘লাখো লাখো শহিদের রক্তমাখা’; আব্দুল করিমের ‘হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো’ উচ্চারিত হয় সম্মিলিত কণ্ঠে ও নৃত্যে।
একক আবৃত্তি পর্বে কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘ছবি’ আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। একক গান অংশে গীতিকার গোবিন্দ হালদার ও সুরকার আপেল মাহমুদের ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ আবৃত্তি করেন নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী। জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ, আমি দেখিয়াছি’ গান পরিবেশন করেন সুমন মজুমদার। গানের সুরদাতা হলেন অজিত রায়।
মুক্ত প্রাণের প্রতিধ্বনি হয়ে সকলের সম্মিলিত কণ্ঠে দেশের গান উচ্চারিত হওয়ার ঘোষণায় ২০১৫ সাল থেকে মহান বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাঠে দেশগান গাইবার আয়োজন করে থাকে ছায়ানট।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে বন্ধ ছিল এই আয়োজন। ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানের জন্য বিজয় দিবসের আয়োজন উক্ত স্থানে করা সম্ভব হয়নি।
আয়োজকেরা জানান, পাকিস্তান আমলে বাঙালির মনে আত্ম-পরিচয়ে বাঁচার বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। বিশ্ব জুড়ে ধর্ম-বর্ণ-আদর্শ নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ বর্তমানে বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রাণের উৎসব। সেই সাংস্কৃতিক জাগরণের সঙ্গে মানবিক বোধ সঞ্চারের লক্ষ্যে ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার’ এই অনুষ্ঠান শুরু হয় ২০১৫ সালের বিজয়-দিবসে।
মহান বিজয়-দিবসের দিনে ভেদাভেদ দূরে ঠেলে জাতীয় পতাকার সবুজে দেহ ও মন রাঙিয়ে সর্বান্তকরণে ষোল আনা বাঙালি হয়ে উঠবার ব্রত নিতে সবাইকে আহ্বান জানায় তারা।
বিজয় দিবসে ভোর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল নানা আযোজন। দিবসটিতে কলা ভবন, কার্জন হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও স্মৃতি চিরন্তনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।