বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭ ঘর বিক্রি!

  •    
  • ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:০৬

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৪ ব্যক্তি তাদের ঘর বিক্রি করেছেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। এটি আইনত অপরাধ।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের গাড়াদহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে সাতটি ঘর অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। কিনে নেয়া ব্যক্তিরা এখন ওই ঘরগুলিতে বসবাস করছেন।

ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পরিবারপ্রতি ২ শতক জমি ও প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকার ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক জানান, বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এ ঘর বিক্রি করেছেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায়।

ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় ভুল মোবাইল নম্বার দেয়া হয়েছে। যাতে বরাদ্দপ্রাপ্তদের সাথে কেউ যোগযোগ করতে না পারে। তাদের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম করেছেন। ফলে বরাদ্দপ্রাপ্তরা এ ঘর বিক্রি করে দেয়ার সাহস পেয়েছেন।

সরজমিনে ঘুরে জানা দেখা যায়, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪ নং ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন আব্দুস সালাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম। কিন্তু স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তির মাধ্যমে ওই ঘর ১ লাখ টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন মোছা. সিরিনা বেগম ও তার পরিবার।

১০ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন বেল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী ছারা খাতুন। কিন্তু এ ঘর ৮০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন মো. আনু ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম।

৮ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন রশিদ দম্পতি। তার ওই ঘরে বসবাস করছেন জাহের ও তার পরিবার। ৯ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ঠান্ডু দম্পতি। কিন্ত এ ঘর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিনে সেখানে বসবাস করছেন পিঞ্জিরা খাতুন ও তার সন্তানেরা। ১৩ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোছা. ফুলমালা। তাদের কাছে থেকে ১ লাখ টাকায় ঘরটি কিনে সেখানে বসবাস করছেন নাজমুল ও তার পরিবার। ১৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন বিধবা রেশমা খাতুন। এ ঘর ১ লাখ টাকায় কিনে এখানে বসবাস করছে হাফিজুল ও তার স্ত্রী নাছিমা খাতুন। ১৭ নম্বর ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন জহুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম। এ ঘর ১ লাখ ১১ হাজার টাকায় কিনে এখানে হালিমা বেগম ও তার পরিবার বসবাস করছেন।

এসব ঘরে বসবাসকারী ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে ঘর কিনে বসবাস করার কথা স্বীকার করেন। তারা বলেন, তাদের কোনো বাড়িঘর নেই। আবেদন করেও তারা ঘর বরাদ্দ পাননি। তাই নিরুপায় হয়ে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের কাছে থেকে চুক্তি করে ঘর কিনে বসবাস করছেন।

১৪ নম্বর ঘরের বরাদ্দ পাওয়া আব্দুস সালামের স্ত্রী সেলিনা বেগম মুঠোফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ঘর বিক্রির একটি টাকাও আমরা পাইনি। এ টাকা নিয়েছেন ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতন কে জি স্কুলের মালিক জুয়েল আহম্মেদ। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলে পারবেন।’

এ বিষয়ে জুয়েল আহম্মেদ বলেন, একটি টাকাও তিনি নেননি। তবে একটি ঘর বিক্রির সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি বরাদ্দ দিয়েছেন শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)। বরাদ্দের তালিকা প্রণয়ন করেছেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আমি শুধু তালিকা অনুয়ায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছি। কাজেই এ বিষয়ে ওনারাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, ‘ঘর বরাদ্দে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। ভালো করে যাচাই-বাছাই করেই ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘ঘর বরাদ্দে কোনো অনিয়ম দুর্নীতি হয়নি। তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। ভালো করে যাচাই-বাছাই করেই ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, কেবলমাত্র তারাই ওই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। এ বিষয়ে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেলে ঘর বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর