ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন নির্মাণ হয়েছে ১৩ বছর আগে। তবে ভবনটি নির্মাণের পর সেখানে এক দিনের জন্যও কোনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেননি। জেলা পরিষদের কোনো নজরদারি না থাকায় ভবনটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
২০০৯ সালে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের টেপাখোলা এলাকায় সোহরাওয়ার্দী সরোবরের পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জায়গায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন হিসেবে ওই ভবনটি বানানো হয়। সেই সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে ‘মেসার্স আর আর কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নির্মাণকাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদকে ভবনটি বুঝিয়ে দেয়। ওই সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ইয়াসমিন আফসানা।
তবে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ভবন নির্মাণসংক্রান্ত ফাইলটি পাওয়া যায়নি। ফলে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তাদের আবাসন থাকার পরও কোন প্রেক্ষাপটে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজল বলেন, ‘ওই ভবন নির্মাণসংক্রান্ত ফাইলটি খুঁজে পাইনি। অনেক দিন আগের ব্যাপার। ওই সময়ের কর্মকর্তারাও কেউ নেই। তাই এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।’
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতল ভবনের মূল ফটকে কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলছে। তবে ভবনটির চারপাশে জানালার থাই গ্লাস ভাঙা। পূর্ব পাশে একটি জানালার গ্রিল কাটা। ভেতরের কাঠের দরজা-জানালাগুলোও ভাঙা। ফ্যান-লাইটসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনটির পূর্ব পাশের জানালার গ্রিলের কাটা অংশ দিয়ে সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা ঢুকে নেশা করেন। জেলা পরিষদের নজরদারি না থাকায় এখানে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।
ভবনের চত্বরে একটি ছাপরা ঘর তুলে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন ৫৪ বছর বয়সী ভূমিহীন শাহানা বেগম। তিনি জানান, পাঁচ বছর ধরে তিনি ওই এলাকায় আছেন। কিন্তু এক দিনের জন্যও জেলা পরিষদের কোনো ব্যক্তিকে ভবনের আশপাশে আসতে দেখেননি।
শাহানা বেগম জানান, ভবনটি পাহারা দেয়া হলে মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হতো না। এ ছাড়া জানালার গ্লাস, দরজা, জানালাসহ ইলেকট্রনিক সামগ্রী চুরি হতো না।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণ করা হলো, কিন্তু কোনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ভবনে থাকলেন না। আমরা যারা জেলা শহরে কাজে আসি, তাদের পক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের সুযোগ কম। তবে আশার কথা হলো সোহরাওয়ার্দী সরোবর ও আশপাশে জেলা পরিষদের জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প শুরু হলে অব্যবহৃত ভবনটি মেরামত করে প্রথমে প্রকল্প কর্মকর্তার আবাসন ও পরে বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্রামাগারের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার ব্যবস্থা করে আয়ের পথও বের করা যেতে পারে।’