ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে নিয়ে ‘অপ্রীতিকর ঘটনায়’ নিরাপত্তা উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। দুই দেশের সম্পর্কে এ ঘটনা প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে হঠাৎ করেই রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমনের বাসায় যান পিটার হাস। সেখানে তিনি অবস্থান করেন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। এ বাসা থেকেই পরিচালনা করা হয় ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের কার্যক্রম।
সুমনের বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যান ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেক সংগঠনের সদস্যরা। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমান বাহিনীতে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। তারা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।
পিটার হাসকে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় বিব্রত ও অপ্রস্তুত হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছুটে যান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে।
‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের ৫০ বছর সম্পর্ক: সম্ভাবনা এবং আগামীর পথচলা’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: নিউজবাংলা
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকরা এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনকে।
সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের ৫০ বছর সম্পর্ক: সম্ভাবনা এবং আগামীর পথচলা’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নেন সচিব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এ ঘটনায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কিছু নেই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
‘দুই দেশের সম্পর্ক তো অনেক দিনের পুরোনো। বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বয়স প্রায় ৫০ বছরের কোঠায়। সুতরাং একটা ঘটনা বা এ ধরনের একটা আচরণে সেই সম্পর্ক নষ্ট হবে, বিষয়টা এমন নয়। ওই রকম কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখি না।’
বিষয়টিকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই জানিয়ে সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী যেটা বলেছেন, সঠিক বলেছেন। এটাকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ঘটনার আকস্মিকতার কারণে উনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আমাদের মন্ত্রী বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
‘একটা ইস্যুতে দুটি দেশের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় না, সেটা নিষেধাজ্ঞা বা যা-ই হোক। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে অবশ্যই আমাদের আরও অনেক যোগাযোগ হবে। পুরো বছরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। দুই পক্ষের মধ্যে সফর বিনিময় হয়েছে। একটা গুজব ছিল ১০ ডিসেম্বর আবার নিষেধাজ্ঞা আসছে। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি। এতে প্রমাণিত হয়, দুই পক্ষই সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’
কূটনীতিকরা কোথায় যাচ্ছেন, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘কূটনীতিকরা যদি কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় যান বা স্পর্শকাতর এলাকায় যান, তখন একটা অনুমতির প্রয়োজন আছে। এ ছাড়া ঢাকা শহরে তারা কখন কোথায় যাবেন, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর বিধান নেই। তবে এলাকাভেদে আগে থেকে অনুমতি নেয়া থাকলে ভালো। তারা নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের জানালে সঠিক ব্যবস্থা করে দেয়া যায়। সেটাও প্রয়োজন ও অনুরোধের ভিত্তিতে।’