‘ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে সফলতা পাওয়া মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কাজ নিয়ে ভয়ভীতি থাকলেও শেষ বিচারে তিনিই বিজয়ী হন।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বৃহস্পতিবার বিকেলে বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এম এ মান্নান বলেন, ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ঝুঁকি নেয়া মানুষ। হোঁচট খেয়েও শেষ বিচারে ফল ভালো আসছে। প্রধানমন্ত্রী যোগ-বিয়োগ করে বিজয় লাভ করেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করেন। শেষ বিচারে তার সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পাই।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ মূল্যায়ন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। সম্মানীত অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব খলিলুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের গবেষক ও বইটির লেখক মনজুর হোসেন।
বইটি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা পেলগ্রেভ মেকমিলান।
ড. মশিউর রহমান বলেন, দেশে শিক্ষার সুযোগের বিস্তার হয়েছে। মানও ততটা খারাপ নয়। অনেক পণ্য দেশে তৈরির সুযোগ থাকলে বাইরে থেকে আনতে হয়। কেননা ব্যবহারকারীরা বিদেশি পণ্যকে প্রাধান্য দেয়।
বইটি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ওপর প্রথম আন্তর্জাতিক একটি প্রকাশনা, যেখানে বাংলাদেশে বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘটে যাওয়া ডিজিটাল রূপান্তর ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে গবেষণানির্ভর ১৪টি অধ্যায়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন, ডিজিটালাইজেশনের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র, ডিজিটালাইজেশনের বর্তমান অবস্থা, ডিজটালাইজেশন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠান গঠন, আইটি ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন, গ্রামাঞ্চলে ডিজিটালাইজেশনের অবস্থা, মানবসম্পদ ও স্কিল গ্যাপ, বিভিন্ন সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের রূপান্তরের প্রভাব, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব এবং টেকসই উন্নয়নে ডিজিটালাইজেশনের ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নের প্রচলিত সূচকগুলো, যেমন গার্মেন্টস রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, কৃষি ইত্যাদির অর্থনীতিতে ক্রমাগতভাবে নিম্নমুখী যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা থেকে উত্তরণে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অনেক সূচকে আমরা প্রতিবেশীদের থেকে পিছিয়ে আছি। ডিজিটাল সেবার এক্সেস-এর ক্ষেত্রে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ এখনও বঞ্চিত রয়েছে মূলত আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে।
ইন্টারনেটের গতি গ্রামাঞ্চলে এখনও শ্লথ এবং এর খরচ গ্রামীণ জনগণের নাগালের বাইরে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটা প্যাকেজগুলো জনবান্ধব নয়। প্রতিটি গ্রামে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই হটস্পট স্থাপন করা যেতে পারে। ডিজিটাল অটোমেশনের ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল শিল্প খাত ও এসএমই খাত অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তাদেরকে অটোমেশন ও ইনোভেশনের জন্য যথাযথ প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন।
ডিজিটাল ফিন্যান্স এবং ই-কমার্সের প্রতি অধিকতর জোর দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই বইয়ে।
বইটিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত বাদেও ছয়টি সেক্টরকে বাছাই করা হয়েছে, যেখানে ডিজিটাল রূপান্তরের অধিকতর সুযোগ রয়েছে। সেক্টরগুলো হলো- ম্যানুফেকচারিং, খুচরা ও পাইকারি বাণিজ্য, হোটেল ও খাদ্য সেবা খাত, রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ খাত এবং পরিবহন ও গুদামজাতকরণ। এ ছয়টি খাত ক্রমবর্ধমান হারে আইটি সেবা ব্যবহার করছে এবং এ খাতগুলোতে ডিজিটালাইজেশনের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।