বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩৫ বছর পর মা-বাবার কাছে ফিরলেন হাসিনা

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৪৯

হাসিনা বলেন, ‘বিয়ের পর আমার পরিবার নিয়ে অনেকের কাছ থেকেই কটুকথা শুনতে হয়েছে। তখন কষ্ট লাগলেও ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। তবে সব সময়ই মনে হতো আমার মা-বাবা বেঁচে আছেন এখনও। আমি আমার পরিবার ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

তখন পাঁচ বছর বয়স হাসিনা আক্তারের। পরিবারের শাসন বোঝার মতো তেমন জ্ঞান হয়নি তার। একদিন কথা না শোনায় সামান্য মারধর করেন মা। এতেই রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান হাসিনা। বাড়ির ঠিকানা মনে করতে না পারায় হারিয়ে যান। এরপর কেটে গেছে ৩৫টি বছর। তবে অবশেষে পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি।

স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আরজে গোলাম কিবরিয়া সরকার। তার মাধ্যমেই পরিবারের সন্ধান পেয়েছেন হাসিনা।

সোমবার দুপুরে বাবা খোরশেদ আলম মেয়েকে দেখতে ছুটে যান হাসিনার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার অরণ্যপাশা গ্রামে। মেয়েকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

জানা গেছে, হাসিনা প্রায়ই মায়ের বকাঝকা খেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দাদুর বাড়িতে গেলেও সেদিন চলে যান সোজা লঞ্চঘাটে। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামে দাদুর বাড়ির পাশেই ছিল লঞ্চঘাটটি। লঞ্চে উঠে পড়েন তিনি। সেখানকার লঞ্চ তাকে নিয়ে ভেড়ে রাজধানীর সদরঘাটে। এরপর কীভাবে ফিরবেন বাড়ি, এই ভেবে একটি দোকানের সামনে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।

হাসিনাকে কাঁদতে দেখেন কেরানীগঞ্জের বরিশুর বাজার কালন্দী গ্রামের হাসেম উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ। ঠিকানা বলতে না পারা শিশুটিকে কাছে টেনে নেন হাসেম। পরে তাকে নিয়ে যান বাড়িতে। হাসেম উদ্দিন নিজের সন্তানের মতোই তাকে লালনপালন করতে থাকেন।

১৪ বছর বয়সে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের ফজলুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় হাসিনার। বিয়ের পর মারা যান তাকে লালনপালন করা মা-বাবা। হাসিনা হন চার মেয়ে আর দুই ছেলের জননী।

বাবার সঙ্গে হাসিনা আক্তার। ছবি: নিউজবাংলা

হাসিনা জানান, স্বপ্ন ছিল কোনো একদিন ফিরে পাবেন নিজের পরিবারকে। সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে ৯ মাস আগে যান ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে। সেই অনুষ্ঠানে খুলে বলেন হারিয়ে যাওয়ার গল্প। এরপর আশায় দিন গুনতে গুনতে অপেক্ষার প্রহর শেষে সপ্তাহখানেক আগে মেলে তার পরিবারের সন্ধান।

হাসিনা বলেন, ‘বিয়ের পর আমার পরিবার নিয়ে অনেকের কাছ থেকেই কটুকথা শুনতে হয়েছে। তখন কষ্ট লাগলেও ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। তবে সব সময়ই মনে হতো আমার মা-বাবা বেঁচে আছেন এখনও। আমি আমার পরিবার ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।’

হাসিনার বাবা খোরশেদ বলেন, ‘মেয়েকে হারানোর পর আত্মীয়স্বজনসহ অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু পাইনি। মেয়ের জন্য সব সময় দোয়া করেছি। মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন বলেই শেষ বয়সে ফিরে পেয়েছি।’

হাসিনার স্বামী ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা তাদের নানা-নানির বাড়িতে বেড়াতে যেতে চাইত। কিন্তু এটি কখনও সম্ভব না মনে করেই কষ্ট পেত। এখন সবাইকে নিয়ে সেখানে যাব।’

এ বিষয়ে আপন ঠিকানার উপস্থাপক গোলাম কিবরিয়া সরকার জানান, আপন ঠিকানার ভিডিও দেখে হাসিনা তার বড় মেয়ের কথায় একদিন আমার স্টুডিওতে আসেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে ভিডিও প্রচার হয়। মেয়ের খোঁজ পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেন খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী মরিয়র আক্তার।

তিনি বলেন, পরিচয় নিশ্চিত করতে স্টুডিওতে হাসিনার কাছে প্রথমে আনা হয় মা মরিয়মকে। বিভিন্ন ঘটনা মনে করে তা মেলাতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে হাসিনার থুতনিতে থাকা ছোটবেলার একটি কাটা দাগের ঘটনার মাধ্যমেই হাসিনা নিশ্চিত হন এটিই তার পরিবার। পরে বাবা খুরশিদ আলমকে স্টুডিওতে আনা হলে শুরু হয় তিনজনের কথোপকথন। আলাপচারিতায় তিনজনেই ফিরে যান ৩৫ বছর আগে। সেই সঙ্গে ৩৫ বছরে জমা থাকা কথাগুলো বলতে থাকেন তারা।

এ বিভাগের আরো খবর