শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতি, বৈষম্য দূর, ভোটাধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ এসেছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বুধবার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জাতির বরেণ্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন তারা।।
সকাল থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল। শিশুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
একটি ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক বাবার সঙ্গে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ফুল দিতে আসে মিরপুরের আলামিন কেজি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ইসলাম তানহা।
কোথায় এসেছে জানতে চাইলে সে বলে, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এসেছে।
কী কারণে এসেছে জানতে চাইলে তানহা বলে, ‘শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে অনেকে শহীদ হয়েছে। সবার এই শহীদদের সম্মান জানানো উচিত।’
একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফারের কাছে জানতে চাওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘৫১ বছর পেরিয়ে এসে বাংলাদেশে সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নতি হয়েছে অনেক। ক্ষুধায় কাতর সেই নিরন্ন মানুষগুলো আজ দুই বেলা খেতে পারছে, তবে স্বাধীনতার সুফলের সঙ্গে বহু অপ্রাপ্তিও রয়েছে।
‘সেই অপ্রাপ্তিকে ঘোচাবে তরুণ প্রজন্ম। তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।’
দুই সন্তানকে নিয়ে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বাচ্চাদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসছি শোক পালন করতে।’
সহজে কিছু অর্জন করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ভালোরই কিছু মন্দ আছে। যে সরকার আসুক, আমরা চাই দেশটা আরও উন্নত হোক; শান্তি বজায় থাকুক। দ্রব্যমূল্য কমুক, বুদ্ধিজীবী দিবসে এই প্রত্যাশা।’
বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শিশুসন্তান নিয়ে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সত্যিকারের বাংলাদেশ আমরা দেখছি না। ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখছি মানুষের ভোটের অধিকার নাই। দ্রব্যের যে দাম, তাতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে।
‘আমি নিজেই আসলে ভোট দিতে পারি নাই। ভোট সুন্দরভাবে দিতে পারব, জিনিসপত্রের দাম কম থাকবে, এটাই আমরা চাই।’
মনিপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আরাফ আলী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো আমরা এখানে আসছি শ্রদ্ধা জানাতে। আমার খুব ভালো লাগছে। মানুষজন শ্রদ্ধা জানাচ্ছে; খুব ভালো লেগেছে দেখে।’
মিরপুর সাংস্কৃতিক ফোরামের আবদুল জাব্বার রাকেশ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছি ৯ মাস। আমরা যেমন বাংলাদেশ চেয়েছি, তার আশিভাগ পেয়ে গেছি। আমরা চাই বাংলাদেশকে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব, সেই আশা ব্যক্ত করছি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে।’
মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মুসলিম বলেন, ‘যে ধরনের সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল, সে ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই তো নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ষড়যন্ত্র সব সময়ই ছিল, থাকবে, কিন্তু ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করার উদাহরণ আমাদের আছে। অপশক্তির নানা ধরনের অপপ্রয়াস থাকে, তবে ইতিহাসের চেতনা দিয়ে সেগুলোকে মোকাবিলা করাই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’