নাব্যতা সংকটে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শাহজাদপুর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের নৌ-রুটের বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে ভিড়ছে না। ফলে বন্দরটির প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, মেঘনা, যমুনা ও বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের আগেই জেগে উঠেছে ডুবচর। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা নৌবন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী কার্গো-জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। পাটুরিয়া ও নগরবাড়ির আগেই লাইটারেজের মাধ্যমে জাহাজ থেকে অর্ধেক মাল আনলোড করে বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করা হচ্ছে। এতে জাহাজশূন্য হয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর অচল হয়ে পড়েছে।
বাঘাবাড়ি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া জানান, চর নাকালিয়া, পেচাকোলা, মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া ও নিকলি এলাকায় নাব্যতা কমে অনেক ডুবচর জেগে উঠেছে। এতে পূর্ণলোডে পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর জাহাজশূন্য হয়ে অচল হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া ডুবোচরে আটকে পড়া জাহাজে প্রতিনিয়ত ডাকাতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওয়াহাব। তিনি বলেন, আতঙ্কে জাহাজ এদিকে আনতে সাহস পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে মাঝপথে পণ্য খালাস করতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘৪০ বছরেও বাঘাবাড়ি নৌবন্দর এভাবে জাহাজশূন্য হয়নি। বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় আমাদের ৫ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত ড্রেজিং করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে নগরবাড়ি, বেড়া ও যশোরের নওয়াপাড়ায় থেকে ট্রাকে করে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের গুদামে সার এনে এরপর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার গুদামে আবাদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সার মজুদ করা যাচ্ছে না। ফলে সারের সংকট সৃষ্টির শঙ্কা করছেন কৃষকরা।
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের চরাচিথুলিয়া গ্রামের কৃষক সোহেল মোল্লা বলেন, ‘সঠিক সময়ে সার মজুদ না হলে উত্তরাঞ্চলে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এতে আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে কৃষকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামের ইনচার্জ হারুন আর রশিদ। তিনি জানান, বন্দরে আপদকালীন সার মজুদের কাজ পুরোপুরি চলছে।
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ-এর উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এটা দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর। ফলে এ বন্দর চ্যানেলে নিয়ম অনুযায়ী ৭ থেকে ৮ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১০/১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই।’
তিনি জানান, বন্দরটি প্রথম শ্রেণিক বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।