বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করেছিল বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অভিযোগ করেছেন, এ জন্য দলটি তার স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তিনি এবং বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে।
এই চেষ্টা মাঠে মারা গেলেও বিএনপি দেশে গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা করছে বলেও দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলার পুরোনো মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এই সমাবেশ ডাকে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নৈরাজ্যের অভিযোগ এনে, সমাবেশের নাম রাখা হয় শান্তি সমাবেশ।
গত শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পর রাজধানীতে এটিই ক্ষমতাসীন দলের প্রথম জমায়েত। এতে লক্ষাধিক লোক সমাগমের ঘোষণাও দেয়া হয়।
বেলা ৩টায় এই সমাবেশ শুরু হলেও নেতা-কর্মীরা আসতে থাকেন দুপুর ১টার পর থেকেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনেকে একই রঙের টুপি, নারীরা একই রঙের শাড়ি পরে সমাবেশে আসেন।
শেরেবাংলা নগরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে নেতা-কর্মীদের একাংশ
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতা আমীর খসরু সাহেব ওয়াশিংটনে গেলেন- সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে তদবির করতে। আমীর খসরু সাহেব, কী পেলেন? আমীর খসরুর মিশন ব্যর্থ। বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে।’
২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র্যাব এবং বাহিনীটির কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা। যাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন বিদায়ী পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদও।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলটির কর্মী-সমর্থকরা আরও একটি নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে প্রচার করতে থাকেন। সমাবেশের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আসা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে আরও একটি নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের ব্যর্থতা ও অপকর্মের জন্য র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবার যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে সেটার জন্যও দায়ী থাকবে সরকার।
বিএনপি গন্ডগোল বাঁধাতে চায়
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ থেকে বিএনপি তাদের ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর যে মিছিলের ডাক দিয়েছে, সেটিরও সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
সেদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন, যেটির ঘোষণা আসে গত ২৮ অক্টোবর। সেদিন সারা দেশ থেকে আসবেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এই দিন বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলোও মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, যাকে উসকানি হিসেবে দেখছেন কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘দুই মাস আগেই আমাদের দলের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটি জানার পরও বিএনপি একই তারিখে রাজধানীসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গণমিছিল পালন করার কর্মসূচি দিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ জেনেও বিএনপি গণমিছিলের আয়োজন করে আমাদের উসকানি দিচ্ছে। এর মাধ্যমে গন্ডগোল বাঁধানোর চক্রান্ত করছে।’
শেরেবাংলা নগরে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমাবেশে নেতা-কর্মীদের একাংশ
কাদের বলেন, ‘আসলে বিএনপি এখন রাজনীতির মাঠে বেপরোয়া ড্রাইভার। তারা (বিএনপি) দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জঙ্গিদের মাঠে নামিয়েছে। আপনারা সতর্ক থাকবেন।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জেগেছে, আজকে এই জনসমুদ্রের উপস্থিতি মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ১০ তারিখে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর বিএনপি পরাজিত হয়েছে। গণতন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিএনপিকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, ‘ভাঙচুর বা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করলে প্রতিহত করা হবে।’
আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেশিশক্তি নয়, আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে চলছি। জনগণের সমর্থনেই আমরা রাজনীতি করি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকীও সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীদের একটি মিছিল বের হয়।