ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের উন্নত দেশগুলো হিমশিম খেলেও বাংলাদেশ তেমন কোনো দুরবস্থায় পড়েনি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অর্থনীতি নিয়ে অহেতুক গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসবে কান দেয়া যাবে না।
মিরপুর সেনানিবাসে মঙ্গলবার সকালে ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান সতর্ক করেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়েও। বলেন, প্রযুক্তির কারণে এসব অপরাধের ধরনও পাল্টেছে। তাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে সেভাবেই।
গোটা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে আবার বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুদ্ধ ঘিরে অবরোধ, পাল্টা অবরোধে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। আমরা এখনও সে দুরবস্থায় পড়ি নাই, অন্তত আমি এটুকু আপনাদের বলতে পারি। আমাদের সেই প্রচেষ্টা আছে।’
যার যতটুকু জায়গা আছে তাতে কিছু না কিছু উৎপাদন করার জন্য আহ্বান বারবার কেন জানাচ্ছেন, সেই বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, ‘যাতে নিজেদের খাবারটা আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়।’
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকার আহ্বান রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, গুজবে কান দেবেন না।’
দেশের পর্যাপ্ত রিজার্ভ এবং ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে বলেও জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে প্রস্তুত।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলের মতো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমনভাবে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি করেছি, যাতে বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে ৬-৭ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীতে এসে পৌঁছানো যায়। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি এবং কাজ চলমান আছে, চলমান থাকবে।’
সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে উন্নত ও শক্তিশালী করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়।
তিনি বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্র নীতি- ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।”
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিয়েও সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াননি বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নিয়ে সতর্কতা
নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন পাল্টে যাওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট-এর পাশাপাশি নন ট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেটগুলো প্রতিহত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
কারণ হিসেবে তিনি সামনে আনেন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কথা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক বদলে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে। তেমনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।’
দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাটাই সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই এই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।’
ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২
ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯৭৯ কর্মকর্তা সাফল্যের সঙ্গে কোর্সটি শেষ করেছেন। এর মধ্যে ৪৪টি বন্ধু দেশের ১ হাজার ৩০১ কর্মকর্তাও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।
বর্তমান কোর্সেও ২১টি বন্ধু দেশের ৪৬ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ এদিন মোট ২৫০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে মাতৃভূমির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হয়ে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।