গত রোববার সংসদে উপস্থিত হয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর বিএনপির দুর্গখ্যাত বগুড়ার দুটি আসন এখন শূন্য।
বগুড়া থেকে পদত্যাগ করা দুই সংসদ সদস্য হলেন বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের মোশারফ হোসেন ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
তাদের পদত্যাগের পরপরই আসন দুটিতে নতুন করে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। তবে প্রার্থীদের তেমন কোনো দৌড়ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা।
ভোটাররা মনে করছেন, বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হলেও উপনির্বাচনে তারা থাকছে না। তাই সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে এই নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিএনপি ছাড়াও এই উপনির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি। বগুড়া জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, 'নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার না হলে কোনো নির্বাচনেই সিপিবি অংশ নেবে না। আমাদের কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।'
একইভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণ বলছে, বরাররই বিএনপির দখলে থাকা বগুড়া-৬ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু না হলেও ভেতরে ভেতরে অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে টি জামান নিকেতার নামটি শোনা যাচ্ছে সবার আগে। তিনি এর আগে ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর নামও রয়েছে আলোচনায়।
ছাত্ররাজনীতি থেকে এখন বগুড়া আওয়ামী লীগের সম্পাদকের পদে থাকা রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে অনেক দক্ষ ও যোগ্য আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন। সবাই এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আমি ছাড়াও অন্তত ১৭ জন আওয়ামী লীগের নেতা উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে দলের নেত্রী যাকে পছন্দ করবেন, আমরা তার জন্য কাজ করব।’
এর বাইরে বগুড়া সদর আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি নূরুল ইসলাম ওমর এই উপনির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। ২০১৪ সালে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘তফশিল ঘোষণা হোক আগে। দলীয় সিদ্ধান্ত কি আসে সেটাও দেখতে হবে। তবে এর মধ্যেই অনেকে ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব।’
কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে বগুড়া-৪ আসন। এ আসনের এমপি ছিলেন মোশারফ হোসেন। তিনি পদত্যাগ করায় আসনটিতে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী সরব হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি ও জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন, নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলালউদ্দিন কবিরাজের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
রেজাউল করিম তানসেন ২০১৪ সালের ১০ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি।
তফশিল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা রেজাউল করিম তানসেন বলেন, ‘এর আগে আমি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এমপি হয়েছিলাম। তাই এবারও আমি আশাবাদী। উপনির্বাচনে আমাকে মনোনীত করবেন নেত্রী।’
এ আসনের কাহালু পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজের শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি আগে থেকেই মনস্থির করেছিলেন-২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেবেন। সম্প্রতি আসনটি শূন্য হওয়ায় ইতোমধ্যেই ভোটের মাঠে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন এই নেতা।
হেলাল উদ্দিন কবিরাজ বলেন, ‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। মতবিনিময় করছি সবার সঙ্গে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয়ভাবে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই অনুযায়ী কাজ করব আমরা।’
এ ছাড়া আসনটিতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুকের নামও শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি এই আসনে জাতীয় পার্টির নতুন আরেকজনের কথাও শোনা যাচ্ছে। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক উত্তরের দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুস সালাম বাবু। জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় এই সদস্য বর্তমানে সম্মিলিত নাগরিক জোট বগুড়ার সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বগুড়া জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্যসচিব হয়েছেন আব্দুস সালাম বাবু। তিনি বলেন, ‘রওশনপন্থি হিসেবে বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব।’
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের মিটিং আছে। ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সিদ্ধান্ত হলেই আমাদের কাছে নির্দেশনা আসবে। সেই মোতাবেক কাজ করব।’