জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একসঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গণভবনে এই সৌজন্য সাক্ষাৎটি হয় বলে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে। সাক্ষাৎকালে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদও উপস্থিত ছিলেন।
তবে এই সাক্ষাৎে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, বা হলে কী নিয়ে আলোচনা, সে বিষয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে রওশন ও জি এম কাদেরের মধ্যে টানপাড়েন দেখা যায়। তবে সম্প্রতি বিরোধ চরমে উঠে যখন রওশন দলের জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়ে বসেন।
রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কেউ এই সম্মেলন ডাকতে পারেন না, এমন কথা জানিয়ে জিএম কাদের ও তার অনুসারীরা জানান কড়া প্রতিক্রিয়া। সেই সঙ্গে দলের সংসদীয় দলের সভায় রওশনকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেয়। এই দাবি মেনে না নিলে সংসদে না যাওয়ার হুমকিও আসে। পাশাপাশি রওশনপন্থিদেরকে দল থেকে একের পর এক বহিষ্কার করা হতে থাকে।
অন্যদিকে জি এম কাদেরের নেতৃত্বের বিষয়টি গড়ায় আদালতে। এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য কয়েক মাস পর বিদেশে থেকে দেশে ফেরেন রওশন। এরপর অবশ্য দুই পক্ষে সমঝোতার ইঙ্গিত মেলে। রওশনপন্থি নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা দুই নেতাকে এক টেবিলে বসানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তবে দেবর ভাবির বৈঠকেও বরফ পুরোপুরি গলেনি। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের প্রতিও একই আহ্বানও জানানো হয়েছে, যদিও জাপা এমপিরা তা নাকচ করেছেন।
এর মধ্যে এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা তা স্পষ্ট না করলেও জাতীয় পার্টিতে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত ইকবাল হোসেন রাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ ও সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ সকাল ১১টায় ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেল থেকে গণভবনে যান। তারা বিকেল ৩টায় ফিরে আসেন। শুনেছি যে জি এম কাদেরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং কুশল বিনিময় করেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের জন্য জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর যে কোনো দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করেন।
জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে এবং দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। জাতীয় পার্টি নিজ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি সংসদ ও সংসদের বাইরে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাবে।