২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের দিন ঢাকায় বিএনপির গণমিছিলের ডাক দেয়ার সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সংঘাত চাইছে।
বিএনপিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধও করেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এদিন আমাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটি উসকানি বা সংঘাত চাওয়ার শামিল।’
মঙ্গলবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির প্রস্তুতি সভায় এসব কথা বলেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ঢাকায় আসবেন। তাই এদিন বিএনপি গণমিছিল করলে সমস্যা হতে পারে।
‘ঢাকা সিটিতে অহেতুক সংঘাতের উসকানি দেবেন না। আমরা সংঘাত চাই না। আপনারা করা মানেই সংঘাতের উসকানি দেয়া।’
বিএনপি সেদিন গণমিছিল করতেই চাইলে তাদের ঢাকার বাইরে করার পরামর্শও দেন ওবায়দুল কাদের।
২০১৯ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৪ ডিসেম্বর একই মাঠে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত জানানো হয় গত ২৮ অক্টোবর
গত শনিবার গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে দেয়া ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বরে ঢাকায় মিছিল করার ঘোষণা এসেছে।
মিছিলটি এমন দিনে হবে, যেদিন রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে সারা দেশ থেকে আসা দলের কাউন্সিলররা সেদিন যাবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলন করার এই ঘোষণা আসে গত ২৮ অক্টোবর।
প্রায় দেড় মাস পর বিএনপি যখন তাদের এই মিছিলের দিনক্ষণ ঠিক করে, তখন ক্ষমতাসীন দলের এই কর্মসূচি মাথায় ছিল কি না, সে বিষয়ে নেতারা কিছু বলছেন না। তবে সংঘাত হবে না, এমন কথা বলছেন তারা।
বিএনপি সরকারবিরোধী সমমনা সব দলকে নিয়ে যে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে, সেটির প্রকাশ হতে পারে সেই ২৪ ডিসেম্বরেই। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে অকার্যকর করে দেয়া ২০-দলীয় জোটে দুই যুগের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ১১টি ছোট দলও সেদিন একই কর্মসূচি নিয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা দেশ থেকে আমাদের নেতা-কর্মীরা আসবে, আমরা সংঘাত চাই না। সে কারণে আপনাদের গণমিছিল কর্মসূচি বাইরে করেন। ঢাকায় গণমিছিল না করতে আমরা অনুরোধ করছি।’
সম্মেলনের দুই অধিবেশন এর আগের সম্মেলনের মতোই হবে বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কূটনীতিকরা সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। সংঘাত পরিহার করতে হবে।’
বিএনপির গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ সুপার ফ্লপ
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জনসভার চেয়ে বেশি জনসমাগমের যে দাবি বিএনপি করেছে, তাকে পাগলামো বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা পাগল হয়ে গেছেন। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ ছিল সুপার ফ্লপ।
‘বিএনপি কিনা বলেছিল? ১১ তারিখ তারেক রহমানের এয়ারপোর্টে আসার কথা। ১০ তারিখ তারা লাল কার্ড দেখানোর কথা। জনগণ তাদের লাল কার্ড দেখাল।’
১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা ১০ দফা দাবির পক্ষে প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের ঘোষণা দেয়া হয়।
বিএনপি যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে, তাতে নতু কিছু দেখতে না পাওয়ার কথাও জানান কাদের। বলেন, ‘বিএনপির ১০ দফা দাবির মধ্যে নতুন কিছু দেখছি না। জনকল্যাণের কোনো কথা নেই। জনগণের কাছে বিএনপির এসব দাবির কোনো দাম নেই।
বিএনপির বিভাগীয় কর্মসূচির দিন কেন ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিল, সেই ব্যাখ্যাও দেন কাদের। বলেন, ‘এদিন সারা দেশের সব ওয়ার্ড, থানা ও পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল। যাতে করে দেশের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে বিএনপি।’
সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহর হিরু, কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপুও উপস্থিত ছিলেন।