ঠাকুরগাঁওয়ে গত মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন করেও লাভবান হতে পারেননি চাষি ও ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে পচেছিল সংরক্ষিত আলু। এ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধও হয়েছিল।
গতবারের মতো এ বছরের সংকটও অনেকটা একই। তাই জেলায় কমেছে আলুর আবাদ। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণ নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত মৌসুমে আলুর চাষ হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে, যা থেকে আলু উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৪ টন। এই মৌসুমে আলুর চাষ হয়েছে ২২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে।
সবশেষ হিসাবে গতবারের চেয়ে এ বছর সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ কম হয়েছে। আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি আলু চাষে।
কৃষি অফিস বলছে, আলু চাষের পরিমাণ এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে এবার আলুর পরিবর্তে কৃষকরা ভুট্টা ও সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
গত মৌসুমে চার বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন সদর উপজেলার নারগুন এলাকার কৃষক আলামিন হোসেন। এবারে তিনি সেই জমিতে করেছেন ভুট্টার চাষ। তিনি জানান, আলু উৎপাদন করতে খরচ ভুট্টার চেয়ে তুলনামূলক বেশি। গত মৌসুমে অধিক উৎপাদনেও লাভ হয়নি। হিমাগারে রাখায় আলু পচে গেছে ৷ তাই এবার এত ঝুঁকি নেননি।
একই এলাকার কৃষক আবু সোহরাব। তিনি গত বছর আলুর চাষ করেনি। পাইকারি দরে আলু কিনে হিমাগারে রেখেছিলেন। হিমাগারে তার রাখা অর্ধেকের বেশি আলু পচে গেছে। এবার তিনি সাত একর জমিতে আলুর আবাদ করছেন।
কৃষক সোহরাব বলেন, ‘এবারে আলুর ফলন ভালো হবে আমার। কিন্তু এত আলু উৎপাদন করেও ভয় হয়। কারণ আমাদের জেলায় যে পরিমাণে আলু উৎপাদন হয়, সে পরিমাণে হিমাগার নেই ৷ ফলে হিমাগার মালিকরা অধিক মুনাফার জন্য ধারণক্ষমতার বাইরে আলু সংরক্ষণ করেন, আর আলু পচিয়ে ফেলেন। এবারও তাই হয়েছে। আন্দোলন করে লাভ হয়নি। এবারও ঝুঁকি নিয়েছি।’
আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সমিতির অনেকেই কৃষক ও ব্যবসায়ী। এবার হিমাগার মালিকরা আমাদের সঙ্গে জুলুম করেছেন৷ ভাড়া বেশি আদায় করেও আলু পচিয়েছেন। ক্ষতিপূরণ আমরা পাইনি৷ ভাড়া কমানো ও ক্ষতি পূরণের দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেও লাভ হয়নি।’
জেলাতে হিমাগার রয়েছে ১৬টি। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০ টন আলু। কিন্তু জেলাতে আলু উৎপাদন হয় এর সাত গুণ।
সমাজকর্মী মাহাবুব আলম রুবেল মনে করেন, ‘জেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, সে হিসাবে হিমাগার না থাকায় আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। হিমাগার মালিকরা সিন্ডিকেট করে বেশি ভাড়া কৃষকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ধারণক্ষমতার বেশি আলু সংরক্ষণ করেন, ফলে আলু পচে যায়৷ সব অঞ্চলে আলুর চাষ ভালো হয় না। খাদ্য উদ্বৃত্ত এ জেলায় আলুর ব্যাপক ফলন হয়। সরকারি হস্তক্ষেপে এ অঞ্চলে আরও হিমাগার হলে চাষিদের উপকার হবে।’
গত মৌসুমে হিমাগারের পচা আলুর দায় নেয়নি ঠাকুরগাঁও হিমাগার মালিক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় হিমাগারে আলু পচেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগারের সংখ্যা কম। আরও কয়েকটি হিমাগার হলে চাষিদের জন্য সুবিধা হবে।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আজিজ বলেন, ‘এ অঞ্চলে আলুর উৎপাদন ভালো হয়। যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, সে পরিমাণ হিমাগার নেই। সংরক্ষণের শঙ্কায় আলু চাষে এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কৃষকরা। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।’