বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের পর দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডব, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস উল্লেখ করে নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
সোমবার বিকেলে রাজনৈতিক জোটটির নেতারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু , সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, দপ্তরে সংযুক্ত আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোর্শেদ আলম গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের বিএনপি কার্যালয়ে স্বাগত জানান।
বিএনপির ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন শেষে মঞ্চের নেতারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তারা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নেতারা অবিলম্বে খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাসসহ আটক সব নেতা-কর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিএনপি অফিসে পুলিশের ভাঙচুরের নিন্দা জানাই। আশা করি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। এ ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার।’
এ সময় তিনি সংসদের অন্য সদস্যদেরও পদত্যাগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। নয়তো সবার ওপর আঘাত আসবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেভাবে হামলা চালিয়ে লন্ডভন্ড করা হয়েছে, তা একেবারেই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। তারা জিয়ার ম্যুরাল ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে।
'আওয়ামী লীগ যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করছে, তা ভয়াবহ। তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আসলে সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’
এ সময় জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন অনিবার্য। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব বন্দিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ শেষ করেছেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। আজ পুলিশ হলো ডাকাত। তারা যা করেছে, এটা নজিরবিহীন।
'জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা হলো। এটা কোনো সভ্য দেশে ভাবা যায়? এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, ‘বিএনপির অফিসে যারা হামলা ও তছনছ করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
'বিএনপির প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান আপনারা নিজেরাও দুঃখ প্রকাশ করুন। তা না হলে গণজাগরণের মধ্য দিয়েই আপনাদের বিদায় হবে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আমরা সংহতি জানাতে এসেছি। যা দেখলাম '৭১-এর তাণ্ডবলীলাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই সরকারের পতন ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি আসবে না। খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ সব বন্দির মুক্তি দাবি করছি।’
অন্যদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের হাসিব উদ্দিন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, জাসদের শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে বুধবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা, যাদের কাছাকাছি ছিলেন পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য।
পরে পুলিশ সড়কে সমবেত বিএনপি নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এতে মকবুল হোসেন নামের একজন প্রাণ হারান। তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দলটির অনেক নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে চাল, খিচুড়ি, ১৫টি ককটেলের পাশাপাশি বোতলজাত পানি ও টাকা উদ্ধারের কথা জানায় বাহিনীটি।
পুলিশ শুরুতে নয়াপল্টন এলাকা থেকে বিএনপির ৩০০ নেতা-কর্মীকে আটকের কথা বললেও দলটির দাবি, সংখ্যাটি ছয় শতাধিক।
সংঘর্ষের খবরে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে এসে ঢুকতে না পেরে ফুটপাতে বসে কয়েক ঘণ্টা পর চলে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরের দিন সকালে বিচারিক আদালতে নাশকতার মামলায় হাজিরা দিয়ে বিজয়নগর হয়ে নয়াপল্টন যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তিনি।
সংঘর্ষের পর ক্রাইম সিন ঘোষণা করা কার্যালয়টি ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।