১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচি নয়াপল্টনে নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে- এই নিয়ে বিরোধে এক সপ্তাহের উত্তেজনা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, প্রাণহানি শেষে শহরের এক প্রান্তে গোলাপবাগ মাঠে শান্তিপূর্ণভাবেই হলো বিএনপির সমাবেশ। তবে সেই সমাবেশ থেকে যে কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে আবার উত্তেজনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গোলাপবাগে বিএনপির দেয়া ১০ দফা দাবিতে ছিল না নতুন কিছু। এতদিন ধরে তোলা দাবিগুলোই একটি জায়গায় তুলে ধরেছে তারা। দাবি আদায়ে যে কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে, সেটিও নমনীয়। সরকার পতনের দাবিতে মিছিল করবে তারা।
উদ্বেগটি এ কারণে যে এই মিছিলটি দলটি এমন দিন করবে, যেদিন রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে সারা দেশ থেকে আসা দলের কাউন্সিলররা সেদিন যাবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ২৪ ডিসেম্বর সম্মেলন করার এই ঘোষণা আসে গত ২৮ অক্টোবর।
প্রায় দেড় মাস পর বিএনপি যখন তাদের এই মিছিলের দিনক্ষণ ঠিক করে, তখন ক্ষমতাসীন দলের এই কর্মসূচি মাথায় ছিল কি না, সে বিষয়ে নেতারা কিছু বলছেন না। তবে সংঘাত হবে না, এমন কথা বলছেন তারা।
বিএনপি সরকারবিরোধী সমমনা সব দলকে নিয়ে যে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে, সেটির প্রকাশ হতে পারে সেই ২৪ ডিসেম্বরেই। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিয়ে অকার্যকর করে দেয়া ২০-দলীয় জোটে দুই যুগের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ১১টি ছোট দলও সেদিন একই কর্মসূচি নিয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারা দেশে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। দলটির সমমনারাও পরে একই কর্মসূচি দিচ্ছে
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একসঙ্গে কর্মসূচি কীভাবে হবে, সে বিষয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি করবে তারা। এই জোটও যদি সেদিন রাস্তায় নামে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা যদি এক হন, তাহলে শীতের এই মৌসুমে দেখা যেতে পারে রাজনৈতিক উত্তাপ।
একই দিন বিবদমান রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি হলে কী হতে পারে, সেই উদাহরণ সামনেই আছে। বিএনপির ক্ষমতায় থাকার শেষ দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেয়া জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে সে সময় আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। প্রাণ হারায় অন্তত আটজন।
নগরীতে একই দিনে দুই পক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচির পর ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ব্যাপক সহিংসতায় ঘটে প্রাণহানি। এরপর সারা দেশে তিন দিনে নিহত হয় আরও ২৩ও
মহাজোটের কর্মসূচি সেদিন ছিল মুক্তাঙ্গন ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। সেখানে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেয়া জামায়াত-শিবির কর্মীদের সঙ্গে প্রথমে কথার লড়াই, এরপর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সেই সহিংসতা পরে ছড়িয়ে যায় দেশজুড়ে। তিন দিনের সংঘর্ষে প্রাণ হারায় অন্তত ২৩ জন।
কর্মসূচি আগেই ঠিক করা ছিল: বিএনপি
এমন উদাহরণ থাকার পরও আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন কেন ঢাকায় বড় কর্মসূচি দিতে হলো- এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেক দলেরই রাজনৈতিক ক্যালেন্ডার থাকে। এই কর্মসূচি কবে কখন হবে সেটা আগেই নির্ধারণ ছিল। আমরা সে অনুযায়ীই কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।’
বিএনপির কর্মসূচির ক্যালেন্ডারটি কবে ঠিক করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এই নেতার কাছ থেকে জানা যায়নি।
সেদিন সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের গোলাপবাগের সমাবেশ আপনারা দেখেছেন। কোনো সংঘাত কি দেখেছেন? আমাদের গণমিছিলও হবে শান্তিপূর্ণ। কোনো সংঘাত হবে না। তবে সরকার যদি বাধা সৃষ্টি করে, তবে সেটা সিচুয়েশন ডিমান্ডে অন্য রকম হবে।’
একই প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে, হবে। তার সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা যেকোনো দিন কর্মসূচি রাখতে পারি। এটা আমাদের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার।’
পায়ে পা পা দিয়ে ঝগড়া
২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন বিএনপির কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি এখন যদি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চায়, আমাদের তো কিছু করার নাই। আসলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যাদের দল আসলে স্কাইপের মাধ্যমে চলে, সেই দল তো সেই স্টাইলেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দেখা যাক, কী হয়।’
বিএনপি যেদিন গণমিছিলের ডাক দিয়েছে তার দেড় মাস আগেই আওয়ামী লীগ তার ২২ তম জাতীয় সম্মেলনের দিন তারিখ ঘোষণা করে। ২৪ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারা দেশ থেকে আসনের নেতা-কর্মীরা
আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (বিএনপি) শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে আওয়ামী লীগ বাধা দেবে না। কিন্তু বিএনপি জামায়াত যদি মিছিলের নামে সহিংসতা করতে চায় আমরা তাদের ছেড়ে দেব না।’
একই পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলের ঘোষণা অনেক আগেই ছিলেন। ওইদিন বিএনপির এমন কর্মসূচি পায়ে পা দিয়ে বিপদ ডেকে আনার মতো।’
একই দিন রাজধানীতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে ঘিরে কোনো ধরনের শঙ্কা করছেন কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্তত আমি দেখছি না। কন্ট্রোলে আছে সব।’