বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটি করবে গণতন্ত্র মঞ্চ

  •    
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৪:০২

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘... ন্যূনতম কর্মসূচি বা দাবিনামার ভিত্তিতে আমরা একটি যুগপৎ আন্দোলন তৈরি করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা অতিদ্রুত বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে সেই বিষয়ে কাজ কিছুটা এগিয়েছে।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাত দলের রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।

রাজধানীর তোপখানা রোডের শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবনের হলরুমে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জোটের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত ১৪ দফা পেশ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ২টায় আমরা বিএনপি পার্টি অফিস পরিদর্শনে যাব। বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ১০ দফা দাবি দিয়েছে। সেখানে বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবে নাকি আলাদা কর্মসূচি দেবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে আগেই আলোচনা শুরু করেছি। আলোচনায় আমরা আমাদের ১৪ দফা দাবি তাদের কাছে দিয়েছি। বিএনপি এর আগে তাদের ১০ দফা আমাদের দিয়েছে। উভয়ের যে অবস্থান সেখান থেকে একটি ন্যূনতম ঐক্যের জায়গা আমরা তৈরি করতে আগ্রহী।’

তিনি বলেন, ‘সেই ন্যূনতম কর্মসূচি বা দাবিনামার ভিত্তিতে আমরা একটি যুগপৎ আন্দোলন তৈরি করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা অতিদ্রুত বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে সেই বিষয়ে কাজ কিছুটা এগিয়েছে। আপনারা শিগগিরই তা জানতে পারবেন।

‘লিয়াজোঁ কমিটি যুগপৎ আন্দোলনের একটি সাধারণ কর্মসূচি কিংবা দাবিনামা সেটা তৈরি করবে এবং পরবর্তীকালে যুগপৎ আন্দোলনের যে মাঠের কর্মসূচি, সেটা এই লিয়াজোঁ কমিটি থেকে আসতে পারে। শিগগিরই এই বিষয়ে অগ্রগতি আপনারা জানতে পারবেন।’

১৪ দফা

১. বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের দ্রুত পদত্যাগ।

২. অবাধ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন, দক্ষ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে নির্বাচনে টাকার খেলা ও মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ, আরপিও সংশোধন, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পরিবর্তন, জনগণের বাঁচার জরুরি সংকটের সমাধান, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বাতিল করবে।

রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার আইনকানুন সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ গণতান্ত্রিক সংস্কারের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।

৩. (ক) প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন।

(খ) সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাস ছাড়া সব বিলে স্বাধীন মতামত ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা।

(গ) প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন।

(ঘ) প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার যৌক্তিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাসহ বিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিতসহ গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা।

(ঙ) রাষ্ট্রের হিসাব ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন সংস্কার।

৪. বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাজা বাতিল; সব ‘হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহার ও সব রাজনৈতিক বন্দির দ্রুত মুক্তি।

৫. সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সভা, সমাবেশ, মিছিলে বাধা সৃষ্টি না করা। বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা বেআইনি হিসেবে গণ্য করা। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দলীয় বাহিনী হিসেবে ব্যবহার না করা।

রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করা। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করতে নতুন কোনো মামলা না করা, গায়েবি মামলায় বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।

৬. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। এর আগে সংগঠিত সব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের যথাযথ তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশি ব্যবস্থার নামে শ্রমিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করা।

৭. (ক) জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গ্রাম-শহরের গরিব ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা ও নগদ অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা চালু।

(খ) গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানিসহ সেবামূলক খাতগুলোতে ‘স্বেচ্ছাচারী পন্থায়’ মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করা। বিদ্যুৎ খাতে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল প্রকল্প ও এ খাতে দেয়া দায়মুক্তি আইন অবিলম্বে বাতিল করা।

(গ) সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত, সুলভে গণপরিহন ব্যবস্থা ও বাসাভাড়ার যৌক্তিক সীমা নির্ধারণ।

৮. বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, শেয়ার মার্কেট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংগঠিত দুর্নীতি ও এর দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করতে শক্তিশালী কমিশন গঠন। দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ পাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে ‘গুমের শিকার’ সব নাগরিককে উদ্ধার। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।

১০. সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১১. (ক) স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা ও ‘বিনা চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু নয়’ নীতির ভিত্তিতে গোটা স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানো। স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে প্রয়োজনীয় সংস্কার।

(খ) ‘শিক্ষা অধিকার, বাণিজ্যিক পণ্য নয়’ নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে সবার জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত, মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদান। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া।

১২. রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।

১৩. কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, পাটকল, চিনিকলসহ বন্ধ কলকারখানা চালু, শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের বাঁচার মতো মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ঘোষণা এবং ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা।

১৪. জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান।

এ বিভাগের আরো খবর