অনুমতি না পাওয়ায় রাজধানীর বিভাগীয় সমাবেশ বিএনপি যেখানে করতে পারেনি, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সেই নয়াপল্টনেই দেয়া হয়েছে বিক্ষোভের ডাক।
গত শনিবার রাজধানীর এক প্রান্ত গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশ থেকে ১৩ ডিসেম্বর এই দাবিতে যে মিছিলের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সেটি কিছুটা পাল্টে এখন সমাবেশও যোগ করেছে তারা।
জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার এই সমাবেশটি হবে নয়াপল্টনে। অর্থাৎ দলীয় কার্যালয়ের সামনেই জমায়েত হবে দলটির নেতা-কর্মীরা।
সোমবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যিনি গত শনিবার মিছিলের ঘোষণা জানিয়েছিলেন।
বিএনপি চেয়াপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান নিউজবাংলাকে জানান, দুপুর ২টায় এই মিছিল শুরু হবে নয়াপল্টন কার্যালয় সামনে থেকে। পরে হবে সমাবেশ।
এতে প্রধান অতিথি থাকবেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।
নয়াপল্টনে বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
গত ১২ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ থেকে বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশস্থল হিসেবে নয়াপল্টনের নাম ঘোষণা করে। তবে পুলিশ তাদেরকে অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না গিয়ে নয়াপল্টনেই জড়ো হওয়ার ঘোষণার পর বুধবার পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ।
পরে দলীয় কার্যালয়ে চলে অভিযান। গ্রেপ্তার হয় কয়েক শ নেতা-কর্মী। সংঘর্ষের দিন সহিংসতার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসকেও।
সমাবেশের দুই দিন আগে নাটকীয়ভাবে বিএনপি নয়াপল্টন ছেড়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম বা মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ নিয়ে আলোচনা শুরু করে। এরপর আগের দিন ঠিক হয় গোলাপবাগ মাঠের বিষয়টি।
সেই সংঘর্ষের পর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত নয়াপল্টন ও বিএনপির কার্যালয় ছিল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিভাগীয় সমাবেশের পরের দিন তালা খুলে দিলে সেখানে যায় দলটির নেতাকর্মীরা। পরদিন সকাল ১১টার দিকে যান স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। করেন সংবাদ সম্মেলন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘১০ দফা দিয়েছি। এই ১০ দফাকে সমর্থন করে যারা যুগপৎ আন্দোলন করবে তারাও কর্মসূচি দিয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর নয়াপল্টন অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল করবে বিএনপি।’
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় ঘিরে বুধবার পুলিশের অ্যাকশন। ফাইল ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রতিটি সমাবেশে বাধা দিয়েছে সরকার। সরকার কোন ভিত্তিতে এই ঘটনা ঘটাল তা আমাদের হিসাবে মেলে না। তাদের হিসাবে খেলা কিন্তু বিএনপি এই খেলায় বিশ্বাস করে না।’
তিনি কথা বলেন গত বুধবারের সংঘর্ষ নিয়েও। বলেন, ‘জনগণ বিক্ষুব্ধ, জনগণ রায় দিয়েছে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব না। জনগণ সরকারকে আর চায় না। ৭ ডিসেম্বরের আচরণ প্রমাণ করে গায়ের জোরের সরকার।’
বিএনপির গোলাপবাগের সমাবেশে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জনসমাগম হয়েছে বলেও দাবি করেন মোশাররফ। বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরে যা প্রত্যাশা করেছিলাম তার থেকে বেশি জনসমাগম হয়েছে। তারপর সরকার যদি এটাকে ব্যর্থ বলে তাহলে কিছু বলার নেই। সরকার দিশেহারা, তারা কোন সময় কী বলবে তা নিয়ে আমরা ভ্রুক্ষেপ করি না। দেশের জনগণও জানে সরকার যা বলে তা করে না।’
বুধবারের সংঘর্ষের পর পুলিশ কার্যালয় ভাঙচুর, প্রয়োজনীয় নথি ও অর্থ গায়েব করে দিয়েছে বলে দলটি যে অভিযোগ করেছে, তার প্রতিকারে মামলা করবেন নি কা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) অফিসে আসতে পেরেছি, কী কী খোয়া গেছে তার তালিকা করছি। তারপর সীদ্ধান্ত নেব কী করব।’