বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের মূল শিকড় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রোথিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বন্ধন, একই স্বার্থ ও মূল্যবোধ এবং পরস্পরের প্রতি আস্থা ও বোঝাপড়া।’
মৈত্রী দিবস উপলক্ষে রোববার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
‘ইন্ডিয়া রিকগনিশন ম্যাটারস’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের মানুষের সঙ্গে মিত্র বাহিনী হিসেবে ভারতের অসংখ্য যোদ্ধার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের শিকড় প্রোথিত। সেই ধারাবাহিকতায় এখন দুই দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে, যা খুবই বিশেষ, বহুমুখী ও অনন্য।’
ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। সংগঠনের সদস্যসচিব নারায়ণ সাহা মনির সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইদুর রহমান সজলসহ অনেকে।
দুই দেশের জাতীয় সংগীত ও একটি তথ্যচিত্র পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘নতুন নতুন আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী বন্ধু দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হচ্ছে। সামাজিক বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উন্নয়ন হচ্ছে।
‘দুই দেশের উন্নতি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত বলে আন্তর্জাতিক এজেন্ডাও প্রায় এক। এ কারণেই একই পথে একসঙ্গে কাজ করতে পারছে দুই দেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহান একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী দিবসে দুই দেশ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্কের সূচনা করে। দুই দেশের সর্ববৃহৎ সহযোগিতার ইতিহাসকে গৌরবের সঙ্গে উপস্থাপন করে মৈত্রী দিবস।’
বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাস আরও ভালোভাবে জানতে দুই দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের শরণার্থীদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য ভারত ও দেশটির জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভারতের সমর্থন না পেলে আমরা কখনোই ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না। ভারত আমাদের শুধু বিশ্বস্ত প্রতিবেশী নয়, পরীক্ষিত প্রতিবেশী। যে মূলনীতিগুলোর ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত, সেগুলোকে ভারত সম্মান করে। আমরাও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় নাগরিকদের পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ চালু করেছি।’
তিনি ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার সরকারের কঠোর নীতি ও অবস্থান তুলে ধরেন এবং আশা করেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুন্দর ও শক্তিশালী হবে।
মূল প্রবন্ধে মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের অবদান চিরস্মরণীয়। বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নিরস্ত্র বাঙালির মুক্তি কামনার আন্দোলনে প্রতিটি মানুষকে দ্রোহী, সাহসী এবং প্রশিক্ষণসমেত বীর যোদ্ধা করে তুলতে ভারত যে সহায়তা করেছে তা উপমহাদেশের গণতন্ত্রের বাতায়নকে উজ্জীবিত করেছে।
‘আমাদের সংগ্রাম ছিল মুক্তি প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় আর মানব মুক্তি প্রতিষ্ঠা। মানব মুক্তির সেই মহাসংগ্রামে ভারত-বাংলাদেশ অটুট বন্ধুত্ব ও আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজও ভারত-বাংলাদেশ কাঁধে কাঁধ রেখে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আর সংগ্রাম ও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িক আচরণ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। এই সম্পর্ক চিরকালীন।’