ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ নাকচ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, মূলত ভার্চুয়াল জগতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর সুবিধা সংবাদমাধ্যমে যুক্ত ব্যক্তিরাও পাচ্ছেন।
ঢাকার একটি হোটেলে রোববার আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মানবাধিকারবিষয়ক সর্বজনীন ঘোষণার ৭৪ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এটি আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় বক্তারা দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই আইন সাংবাদিকদের মত প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি মামলা করা হয়েছে এই আইনে।’
দেশে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বাড়লেও সেটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ গণমাধ্যম এখন প্রাইভেট সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে চলছে। এখন আপস করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। গণমাধ্যম নিজেদের স্বাধীন হিসেবে অনুভব করছে না।’
অধ্যাপক কাবেরী গায়েনের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল ধারণা রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (কাবেরী গায়েন) এই আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সেই তথ্য জানালেও, এটি কিন্তু জানাননি- এই আইনে কত সাংবাদিক সুবিধা পেয়েছেন। কয়েক শ সাংবাদিক গত কয়েক বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছেন।’
সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের লক্ষ্য নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এখন ডিজিটাল হচ্ছে। এখন ১২ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ১৮ কোটি মানুষ মোবাইল সিম ব্যবহার করেন। ১৪ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ৭ কোটি মানুষ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।
‘যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কিছু ঘটে থাকে, যেমন কোনো ভুল তথ্য শেয়ার করা হয় বা কাউকে অ্যাবিউজ করা হয় তাহলে কোন আইনে সেটির প্রতিকার হবে? সাধারণ মানুষ- তিনি হতে পারেন কৃষক, কর্মজীবী বা সাংবাদিক; তিনি যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর কিছুর সম্মুখীন হন তাহলে সেটি প্রতিকারের জন্য অবশ্যই একটি আইন থাকতে হবে, আর সেটিই হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।’
অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড তার দেশের সংবাদমাধ্যমের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে সাংবাদিকরা মুক্তভাবে কাজ করতে পারেন। মত প্রকাশে কোনো বাধা নেই। তাদের কখনও আক্রান্ত হতে হয় না। সুইজারল্যান্ডে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়াইন লুইস, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজীব উল আলম।