বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওবায়দুল কাদেরই কি আবার সাধারণ সম্পাদক?

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:২৬

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে টানা দুই মেয়াদে আছেন ওবায়দুল কাদের। এবারও দৌড়ে থাকছেন তিনি। দলের ভেতরে অনেকে মনে করছেন, টানা তিনবার এ পদে থাকার রেকর্ড করার সম্ভাবনা আছে তার।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। দলটি ভেতরে ভেতরে সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। পাশাপাশি দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের জায়গায় কে বসছেন, এই আলোচনাও জোরালো হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও কৌতূহল সৃষ্টি করছে।

শাসক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এবার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে। তিনি তৃতীয় মেয়াদেও থাকছেন নাকি অন্য কেউ আসছেন এ বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন আগ্রহীরা। তবে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে কারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের ইতিহাস নেই। ওবায়দুল কাদের যদি আবার এ পদে থেকে যান, তাহলে সেটা হবে রেকর্ড।

প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান চার মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তবে সেটা একটানা নয়। তিনি পরপর দুই মেয়াদে ওই পদে দায়িত্ব পালনের পর লম্বা বিরতি দিয়ে আবার টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

কিছুদিন আগেও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। অন্তরায় ছিল শারীরিক অবস্থা। এ বছরের প্রথম দিকে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না, এমন গুঞ্জন ছিল। কিন্তু এ মুহূর্তে তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ্। দেশব্যাপী চষে বেড়াচ্ছেন। জেলায় জেলায় গিয়ে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ৩ ডিসেম্বরে রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে ছিলেন প্রধান অতিথি। আবার সেদিনই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সশরীরে অংশ নিয়ে চলে যান চট্টগ্রামে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ ডিসেম্বরের প্রস্তুতি দেখতে।

ঢাকার বাইরের অধিকাংশ কর্মসূচিতে যদিও তিনি হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন, তবু দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার এই কর্মশক্তির প্রশংসাই করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ওবায়দুল কাদের।’

অন্য যারা দৌড়ে আছেন

এ পদের জন্য আরও কিছু নাম বেশ কিছুদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে। এদের অন্যতম হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ। এ ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান এবং আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির নামও মাঝেমধ্যে শোনা যায়। এদের মধ্যে ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক এগিয়ে। মাহবুব উল আলম হানিফ সাংগঠনিক দক্ষতা দেখালেও এখন দলে কোণঠাসা। তা ছাড়া নিকট অতীতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছাড়া অন্য পদে থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়নি।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ড. রাজ্জাক সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। গত দুই সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র এবং গত নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। গত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের উল্লেখযোগ্য দাবিদার ছিলেন তিনি। কিন্তু দলের তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব একটা নেই বলে সমালোচনা করা হয়। তবে দলের অভ্যন্তরীণ, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

দল এবং সরকারকে আলাদা করার যে আলোচনা তাতে এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। কেননা নানক মন্ত্রী নন, সংসদ সদস্যও নন। গত নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তাকেসহ কয়েকজনকে দলের নির্বাচন পরিচালনা এবং পরে ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। নানক তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, যুবলীগেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংগঠক হিসেবে পরীক্ষিত।

কিন্তু ওবায়দুল কাদের কয়েকটি ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন। তার মাঝে যেমন দল পরিচালনা, ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেয়া, পরিশ্রম, মেধার সমন্বয় আছে, তেমনি আছে কঠিন সময় উতরানোর অভিজ্ঞতা। ১৯৯২ সালের পর যখন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছিল না, তখন তার নেতৃত্বেই ‘ওকে কমিশন’ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সংগঠনটি। ২০১৮-এর নির্বাচনেও তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ এ বছর সংবাদ সংস্থা ‘বিবিসি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এবার প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতা-কর্মীরা সারা দেশেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানে আওয়ামী লীগকে তাদের ঘর গোছাতে হবে। আওয়ামী লীগকেও একটা বড় দল হিসেবে মাঠে শক্তির পরিচয় দিতে হবে এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেখানে সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তা বিবেচনায় নেবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের জনসভায় জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যারা দায়িত্ব পাবেন, তাদেরকেই নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হবে। কেননা সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এবার বিরোধী দল বিএনপি মরিয়া হয়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে এবং নির্বাচনে অংশ নেবে। সেই বিবেচনায় ওবায়দুল কাদেরই একমাত্র পরীক্ষিত ব্যক্তি। তা ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যেমন তার সুসম্পর্ক, তেমনি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতেও তাকে নিয়ে অস্বস্তি নেই।

দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন তিনিই দলের সাধারণ সম্পাদক হবেন বলে নিউজবাংলার কাছে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আসন্ন সম্মেলনেও শেখ হাসিনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আমরা প্রত্যাশা করি, তিনিই সভাপতির দায়িত্ব নেবেন। আর সম্মেলনে কাউন্সিলররা তার মনোভাব বুঝেই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে থাকেন, যা নিকট অতীতে বারবার দেখা গেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর