আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবৈধ মনে করা বিএনপির সংসদে যাওয়াটা ভুল ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়া দলটির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি রুমিন ফারহানা।
ঢাকার গোলাপবাগে শনিবার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের ঘোষণার পর লিখিত পদত্যাগপত্র নিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশের আগে রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সাত এমপির পাঁচজন আজ পদত্যাগপত্র নিয়ে যান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে। অসুস্থ ও বিদেশে থাকায় তাদের সঙ্গী হতে পারেননি হারুন অর রশীদ ও উকিল আবদুস সাত্তার, যাদের হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন রুমিন।
‘গতকাল আমাদের দলের গণসমাবেশ থেকে ১০টি গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। তার প্রথম যে নির্দেশনা ছিল সংসদ ভেঙে দেয়া এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে; বলা হয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা’, বলেন রুমিন।
‘এই সংসদ ভেঙে দেয়ার যে দাবি আমাদের দলের, সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করছি। আজকে আমরা স্পিকার মহোদয়ের হাতে আমাদের পদত্যাগপত্র তুলে দেব’, যোগ করেন তিনি।
স্পিকার পদত্যাগের বিষয়ে অবগত জানিয়ে বিএনপির আলোচিত এমপি বলেন, ‘আমরা গতকাল ইমেইলের মাধ্যমে এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় স্পিকারকে ফোন করে জানিয়েছি, আমরা সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছি। তিনি (স্পিকার) বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে অবগত আছেন। কারণ মিডিয়াতে ততক্ষণে এই খবর প্রচার হয়ে গেছে। সুতরাং এই সংসদ থেকে আমরা আজকে পদত্যাগ করছি।’
সংসদ থেকে পদত্যাগের কারণ নিয়ে রুমিন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এই সংসদে আমরা যতটুকু পেরেছি, আমরা জনগণের কথা, দেশের কথা, মানুষের কথা, আপনাদের কথা বলবার চেষ্টা করেছি। আমাদের বাধা দেয়া হয়েছে। আমাদের সময় দেয়া হয়নি।
‘আমাদের সুযোগ খুব সীমিত ছিল। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখন বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করছি এবং আমি মনে করি সংসদে আর যেসব দল আছে, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাস করে এই লুটপাটের ওপর নির্ভর করা সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর ন্যূনতম নৈতিক অধিকার নেই, সেই সমস্ত দলেরই সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’
বিএনপির সাতজনের পদত্যাগে সংকট তৈরি হবে না বলে সরকারদলীয় নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বলেন, ‘সংকট তৈরি হবে কী হবে না, সেটা তী আপনারা নিজেরাই দেখবেন। সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দল বলতে যদি কিছু বোঝা যায়, সেটি হলো বিএনপি।
‘সেটা দেশের মানুষ যেমন জানেন, সরকারও তেমন ভালো করেই জানেন। আর সংকট যে তৈরি হবে, সেটা বোঝা যায় যখন প্রথমেই বলে সংকট তৈরি হবে না।’
সংসদে আসার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদম ভুল ছিল না। আমরা বলেছিলাম, যে সীমিত সুযোগ আমরা পাব, সেই সীমিত সুযোগের সদ্ব্যবহার আমরা করব। আর সাড়ে তিন বছরে আপনারা দেখেছেন আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। সুযোগ দেয়নি, সময় দেয়নি, মাইক অফ করে দিয়েছে। এর মধ্যে থেকেও যতটা সম্ভব করেছি।’
পদত্যাগের সিদ্ধান্তের জন্য পরে মন খারাপ হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে রুমিন বলেন, ‘না, একদম মন খারাপ হবে না।’