নয়াপল্টনের সড়কে সমাবেশ করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে রোববার সকালে কার্যালয় খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। একইসঙ্গে গণপরিবহন চলাচলে নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল সড়কের ব্যারিকেড শনিবার রাতেই তুলে নেয়ার কথাও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হতে পারে, এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল। এর পাশাপাশি নয়াপল্টনেও তারা (বিএনপি) একটি ইনসিডেন্ট ঘটিয়েছে।
সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নয়াপল্টন এলাকায় যান চলাচল ও বিএনপির পার্টি অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘কাল (রোববার) সকালে পার্টি অফিস খুলে দেয়া হবে ও আজ (শনিবার) রাত থেকেই সড়কে যান চলাচল করতে পারবে।’
পার্টি অফিস খুলে দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে অনুরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো অনুরোধ বা আবেদন আমরা পাইনি, আমাদের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজ শেষে আমরাই খুলে দিচ্ছি।’
জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নয়াপল্টনের সংঘর্ষ ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় যেহেতু মামলা হয়েছে তাই তদন্তকারী একাধিক সংস্থার প্রয়োজনে গত কয়েকদিন বিএনপি কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
আলামত জব্দ, ভবন তল্লাশিসহ আরও আইনি প্রক্রিয়া শেষে রোববার সকালে পার্টি অফিস খুলে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রবিবার দুপুর ১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাবেন ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স।’
এদিকে রাজধানীর গোলাপবাগে শনিবার বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। তবে সকাল থেকেই বিএনপি কার্যালয়ে ছিল সুনসান নীরবতা। দলের কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে নয়াপল্টন এলাকায় ভিড়তে দেখা যায়নি। এমনকি সমাবেশ শেষেও নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজ গন্তব্য ছুটেছেন।
বিএনপি কার্যালয় ছিল নীরব
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে কার্যালয়ের মূল ফটক ছিল তালাবদ্ধ। অন্যদিকে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নয়াপল্টন এলাকায় লাঠি-সোটা নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে।
ভোর থেকেই নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল থেকে আরামবাগমুখী রাস্তা ছিল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পুরো এলাকার অলিতে গলিতে ছিল পুলিশের ব্যারিকেড৷ যান চলাচল বন্ধ থাকার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যাতায়াতও ছিল খুব নিয়ন্ত্রিত।
সড়কের দু’পাশে যত অলিগলি ছিল, সেখানেও ছিল পুলিশের ব্যারিকেড। তবে বেলা শেষে কিছুটা শিথিল অবস্থা দেখা গেছে।
সন্ধ্যা সাতটায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেছে। কার্যালয়ের পাশেই কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য অবস্থান করছে। তবে সকালে যেমন তাদের সতর্ক অবস্থান ছিল সন্ধ্যায় তা দেখা যায়নি। এছাড়া ব্যারিকেডও ঢিলে-ঢালা ভাব ছিল।
অন্যদিকে সকালের চেয়ে সন্ধ্যায় অলি-গলিতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকার সব মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ ছিল।
গোলাপবাগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ
এদিকে নয়াপল্টন নিয়ে সংঘর্ষের পর শেষ পর্যন্ত রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার এই জমায়েতের আগে উত্তেজনা ছড়ালেও মাঠে তার প্রভাব দেখা যায়নি। গোলাপবাগের এই সমাবেশে কোনো ধরনের গোলযোগ হয়নি। নেতা-কর্মীরা নির্বিঘ্নে এসেছেন, বাড়িও ফিরছেন নির্বিঘ্নে।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয় প্রধান অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
পরে বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে সমাবেশ সমাপ্তের ঘোষণা দেয়ার পর নেতারা তাদের কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দেন।
সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা মিছিল করতে করতে বাড়ি ফিরছেন। তাদের বক্তব্য, এই সমাবেশ সফল হয়েছে। তাদের ভাষায়, নানা বাধার পরও তারা জমায়েত হতে পেরেছেন এবং এটিই তাদের সার্থকতা।
১৩ ও ২৪ ডিসেম্বর বিক্ষোভ
সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ও ইউনিটে গণমিছিল ও গণবিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মুক্তির দাবি ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর একই কর্মসূচি পালনের কথাও জানান তিনি।
এরআগে, বুধবার ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ যায় একজনের।
সংঘর্ষের পর আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ বিএনপির প্রায় পাঁচশ’ নেতা-কর্মী আটক ও গ্রেপ্তার হন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে আমান উল্লাহ আমান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েলের জামিন দেন।
এরপর, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেয়।
পরে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে উপস্থিত করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে শুক্রবার বিকেলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।