বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংশয় আর ভয়ে বন্ধ দোকানপাট

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:২২

বিএনপি শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিল করে ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অপরদিকে নগরীর প্রতিটি এলাকার মোড়ে মোড়ে সতর্ক পাহারা বসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কায় রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে রাখার সাহস পাননি।

‘ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, শোডাউন দিচ্ছে শত শত নেতাকর্মী। সতর্ক পাহারায় পুলিশও। কখন কী হয়, এই আশঙ্কায় দোকান খুলি নাই। খুললে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই!’

চোখ-মুখে এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে শনিবার দুপুরের দিকে কথাগুলো বললেন রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার মুদি দোকানি জসিম উদ্দিন।

বিএনপি শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিল করে ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অপরদিকে নগরীর প্রতিটি এলাকার মোড়ে মোড়ে সতর্ক পাহারা বসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এ অবস্থায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কায় রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে রাখার সাহস পাননি। অবশ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা বা ঘোষণা ছিল না।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কিছু হলেই সেটার প্রভাব পড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর। সমাবেশের কারণে আতঙ্কে অনেকে দোকান খোলেননি। অবশ্য এদিন দোকান বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’

ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু বলেন, ‘মার্কেট কিংবা বিপণি বিতান বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে অনেকেই আতঙ্কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেননি। আবার যারা খুলেছেন তাদেরও ব্যবসা হয়নি।‘

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে শনিবার দিনভর রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল থমথমে। নগরী জুড়েই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। অনেক জায়গায় খুলে রাখা হলেও ছিল না ক্রেতা। কেউ কেউ আবার দোকানের অর্ধেক অংশ খুলে রাখেন। অনেকে দোকান না খুলে বাইরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, পল্টন, নয়াপল্টন ও গোলাপবাগের আশপাশ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব এলাকায় ব্যবসা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল না। বড় বড় মার্কেট এবং বিপণি বিতান খুলে রাখা হলেও ক্রেতা ছিল না। যানবাহন বন্ধ থাকায় ক্রেতারা গন্তব্যে পৌঁছতেও পারেননি

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, ফুটপাত ও সড়কে অসংখ্য লোকজন বসে আছে। বিএনপির সমাবেশ নিয়ে নানা কারণে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তাই দোকান খুলতে এসেও অনেকে ফিরে গেছেন।

তারা জানান, অনেকে দোকান না খুললেও বসে আছেন সামনে। এর আগে এই এলাকায় এত লোক কোনো সমাবেশে আসতে দেখেননি তারা।

মূলত শনিবার সকাল ১১টায় সায়েদাবাদের কাছে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। তার আগে রাত থেকেই নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করে। ফলে ওই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

পল্টনের একজন ওষুধের দোকানি বলেন, দোকান বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। কিন্তু মার্কেটে অনেকে দোকান খোলেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তারা দোকান বন্ধ রেখেছেন।

ফার্মগেটের ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, ‘মারামারি বা সংঘর্ষ হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি। তাই দোকান বন্ধ রেখেছি।’

শেওড়াপাড়ার ফুটপাতের দোকানি তসলিম বলেন, ‘বিকেলের পর দোকান খোলার ইচ্ছা আছে। তখন পরিস্থিতি শান্ত হতে পারে।’

মেট্রোরেল স্টেশনের নিচেই ছোট্ট চায়ের দোকান চালান স্বপন কুমার। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টায় দোকান খুলি। আজ ১২টার দিকে খুলেছি। দু-একজন পুলিশ ছাড়া ক্রেতা নেই। ক্রেতাদের চাপ থাকে। কিন্তু আর বেচা-বিক্রি হবে না মনে হয়।’

চা বিক্রেতা হাফিজ মিয়া বলেন, ‘দুপুর পর্যন্ত ২০ কাপ চা-ও বিক্রি হয়নি। আজ সকাল থেকে মানুষই নেই। চার ঘণ্টা বসে থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য দিন এই সময়ে ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি হয়।’

ফুটপাতের শীতবস্ত্র বিক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আজ ভয়ে দোকান পুরোপুরি খুলতেই পারলাম না। আর খুলেই বা কী হবে, লোকজন নেই। বিক্রি করবো কার কাছে!’

পোশাক, কসমেটিকস, কম্পিউটার, এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য জনপ্রিয় এলিফ্যান্ট রোড। ব্যস্ততম এই এলাকা সকাল থেকেই ছিল সুনসান।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘একদিন দোকান বন্ধ মানেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেশি সমস্যা। অনেকের দোকান একদিন না খুললে ঘরের খাবারই হয় না। এজন্য কাল থেকে যেন সবাই দোকান খোলে আমরা সেই চেষ্টা করছি। কোনো ধরনের নাশকতা বা ঝামেলা না হলে দোকানপাট স্বাভাবিকভাবেই খুলে যাবে বলে মনে করছি।’

ঢাকা মহানগর দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা আছে- সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। তাই দোকানপাট বন্ধ রাখার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অুনযায়ী, সারাদেশে তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৬ লাখ ৭৬৩। এর মধ্যে রাজধানীতেই সাড়ে ৫ লাখ ক্ষুদ্র বা সাধারণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি।

এ বিভাগের আরো খবর