ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনে করছে, জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ সংসদীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। এমনকি জাতীয় রাজনীতিতেও এই পদত্যাগ কোনো ভূমিকা রাখবে না। কেননা, ৩৫০ সদস্যের সংসদে সাতজন পদত্যাগ করলে জাতীয় সংসদের কার্যক্রমে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। পদত্যাগকারীদের আসনে উপনির্বাচন হবে।
শনিবারের বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে দলটির এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে নিউজবাংলাকে শাসক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মন্তব্য জানতে চায়।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও শনিবার সাভারে এক জনসমাবেশে বলেন, ‘সাতজন গেলে জাতীয় সংসদ অচল হয়ে পড়বে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিএনপির সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণাকে ‘স্টান্টবাজি’ মনে করছেন।
শনিবার বিএনপির সমাবেশে দলটি থেকে নির্বাচিত বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) সিরাজ ঘোষণা দেন তারা পদত্যাগ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাতজন আছি। সাতজন এমপি। গতকাল আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা এই সংসদের যারা এমপি ছিলাম, এই জনসমুদ্রকে সাক্ষী রেখে আমরা আজ সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে চাই।’
পরে সেটি আরও পরিষ্কার করেন বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘এই সংসদে থাকা-না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের পদত্যাগপত্র ই-মেইলে পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে শনিবার ছুটির দিন। আগামীকাল সংসদ সদস্যরা স্পিকারের কাছে এই পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেবেন।’
তিনি জানান, দলটির সাতজন সংসদ সদস্যের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে আছেন। তবে তিনিও পদত্যাগপত্রে সই করে গেছেন।
এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মাহবুব উল আলম হানিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যদের নেতা হারুনুর রশীদ। তিনি কোনো ঘোষণা দেননি। যারা দিয়েছেন, তারা এ ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। আর স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র না দিয়ে জনসভায় বিএনপি সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণা স্টান্টবাজি। বিএনপির সাত সদস্যের পদত্যাগে জাতীয় সংসদের কিছু যায় আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সাতজন যদি পদত্যাগ করেন, তাতে যদি কিছু এসে যায়, তাহলে তারা হলেন সেসব এলাকার মানুষ, যেখান থেকে তারা নির্বাচিত হয়েছেন। কেননা, মানুষ তাদের ভোট দিয়েছেন সংসদে তাদের কথা বলা জন্য, এলাকা রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য। কিন্তু মেয়াদ পূর্ণ না করেই তাদের পদত্যাগ হবে ওই জনগণদের সঙ্গে প্রতারণা।’
বিএনপির গণসমাবেশ থেকে এ ঘোষণা আসার পরপরই সাভারে আরেকটি সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সেখানে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলেন। কিন্তু আপনারা সাতজন গেলে জাতীয় সংসদ অচল হয়ে পড়বে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ এই ভুলের জন্য বিএনপিকে অনুতাপ করতে হবে।’
জাতীয় সংসদে এ মুহূর্তে বিএনপিদলীয় সাতজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। ২০১৮ এর নির্বাচনে বিএনপি জয় পায় ছয়টি আসনে। সেই নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে জয় পাওয়া মির্জা ফখরুল শপথ নেবেন না জানিয়ে দিলেও ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান সবার আগে শপথ নেন। পরে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল শপথ নেন চার সংসদ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুল সাত্তার ভুঁইয়া।
ফখরুলের আসন শূন্য ঘোষিত হলে ২০১৯ সালের ১২ জুনের উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে জেতেন জি এম সিরাজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে তিনটি কেন্দ্রে স্থগিত ভোট পরে অনুষ্ঠিত হলে জয় পান বিএনপি নেতা আবদুস সাত্তার ভুঁইয়া। এরপর জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনে আনুপাতিক হারে বিএনপি সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায়। দলটি মনোনয়ন দেয় রুমিন ফারহানাকে, যিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও পাননি।
এই সংসদ সদস্যরা শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাতজন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না। সংসদীয় কার্যক্রম বা জাতীয় রাজনীতিতে এ সিদ্ধান্ত কোনো ভূমিকাও রাখবে না। শুধু আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে ওই সব আসনে উপনির্বাচন হবে।’