বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংসদে বিএনপি না থাকলেও থাকবেন গোলবাগী

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:১৩

রেজাউল করিম বাবলু ওরফে গোলবাগী বলেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? আমি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। আমার পদত্যাগের কোনো কারণ নেই। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছে। এমন কথা শুনতে পাচ্ছি।’

রাজধানীর গোলাপবাগে গণসমাবেশে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন এমন ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই সাতজনের একজন না হলেও গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন পেয়েই এমপি হয়েছিলেন রেজাউল করিম বাবলু ওরফে গোলবাগী।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘জিয়া পরিবারের আসন’ বলে খ্যাত বগুড়া-৭ আসনে (শাজাহানপুর-গাবতলী) ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন রেজাউল।

ওই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। পরে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলা শাখার মোরশেদ মিলটন।

কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এখানে আওয়ামী লীগেরও কোনো প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে কাজ করে। তিনি তৎকালীন গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজম খানের স্ত্রী এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খানের শাশুড়ি।

এ অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিএনপির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি রেজাউল করিম বাবলু।

এ বিষয়ে শাজাহানপুর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক খায়রুল বাশার বলেন, ‘২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী রেজাউল করিম বাবলুকে আমরা শুধু মাঠপর্যায়ে সমর্থন দিয়েছিলাম। তার ভোট করেছিলাম। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তিনি আর আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। আমরাও তার কাছে যাইনি।’

পদত্যাগের কথা জানতে চাইলে এমপি রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? আমি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। আমার পদত্যাগের কোনো কারণ নেই। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছে। এমন কথা শুনতে পাচ্ছি।’

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় আসেন রেজাউল করিম বাবলু। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপন করারও অভিযোগ আছে।

এমনকি সংসদ সদস্য হওয়ার দুই মাসের মধ্যে বদলে যায় তার আর্থিক অবস্থাও।

সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বরে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দিকে পিস্তল তাক করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন রেজাউল করিম। ওই দিন প্রকল্পের জন্য দেয়া টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে তার সঙ্গে উপজেলা যুবলীগ নেতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্ব থামাতে গেলে পাল্টা উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নুর দিকে নিজের পিস্তল তাক করেন এমপি। পরে তিনি আত্মরক্ষার জন্য পিস্তল বের করেছিলেন বলে দাবি করেন।

নির্বাচন কমিশনের হলফনামার ৩ এর ‘ক’ ধারায় বলা হয়েছে, অতীতে প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা আছে কি না, থাকলে তার ফলাফল উল্লেখ করতে হবে। উল্লেখ করতে হবে যে আইন ও ধারায় মামলা হয়েছে। কোন থানায় মামলা হয়েছিল। মামলার নম্বর এবং মামলার ফলাফল।

রেজাউল হলফনামায় দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল না। কিন্তু পরে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে মামলা করেছিলেন আবু হায়াত নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার গোয়ালগাছা গ্রামে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালে শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি থাকা অবস্থায় চাকরি দেয়ার নাম করে আবু হায়াতের কাছ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন গোলবাগী। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আবু হায়াতকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তিনি টাকাও ফেরত পাননি।

মামলার বিষয়ে আবু হায়াত বলেছিলেন, ‘এই বাবলু চাকরি দেয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়েছেন।’

হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বলেন, ‘হলফনামায় আমি তথ্য দিয়েছি কি না, এ বিষয়ে আমার এখন কিছু মনে নেই। কাগজপত্র দেখে বলতে পারব।’

এ ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্যও বেশ কয়েকবার শিরোনাম হয়েছেন গোলবাগী

এদিকে, সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখান রেজাউল করিম বাবলু। আয়ের উৎস বলা হয়েছে কৃষি ও ব্যবসা। এর মধ্যে কৃষি থেকে বছরে আসে ৩ হাজার টাকা। আর ব্যবসা থেকে বছরে আয় ২ হাজার টাকা। নির্বাচনের আগে তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার। ব্যাংকে জমার পরিমাণও ৩০ হাজার টাকা। তার মোটরসাইকেলের মূল্য ৫০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সংসদ সদস্য হওয়ার আগে রেজাউল করিম বাবলুর দৃশ্যত কোনো ব্যবসা ছিল না। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলা বুলেটিন নামে একটি পত্রিকার শাজাহানপুর উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে গাড়ি (নোয়াহ হাইব্রিড) কিনে আলোচনায় আসেন তিনি।

এ বিষয়টি আমলে নিয়ে গত মার্চ মাসের শুরুতে তার সম্পদের প্রাথমিক তথ্য চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদকের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়। চিঠিতে ২০২১ সালের ১৪ মার্চের মধ্যে হাজির হয়ে সম্পদের প্রাথমিক হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।

নোটিশের পরে ১৪ মার্চ তিনি বগুড়ার দুদক কার্যালয়ে যান। তবে সেদিন কোনো তথ্য জমা দেননি। রেকর্ডপত্র গোছানো না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সম্পদের হিসাব জমা দিতে দুদকের কাছে সময় চান তিনি।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কাগজপত্র প্রমাণসহ আগামী তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করব। দুদক কর্মকর্তারা আপাতত মৌখিকভাবে সময় দিয়েছেন।’

পরে দুদক তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয় সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার জন্য। এরপর তিনি তার সম্পদের প্রাথমিক নথি দুদকে জমা দেন।

এ বিষয়ে রেজাউল করিম বাবলু বলেছিলেন, ‘সর্বশেষ আমি যে সাত দিনের সময় নিয়েছিলাম তখনই সম্পদের হিসাব দিয়েছি।’

এরপর থেকে তার সম্পদের হিসাব যাচাইবাছাইয়ের কাজ ঝুলে আছে।

জানতে চাইলে জেলা দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছু সম্পদের বিবরণী পাওয়া গেছে। সেগুলোর যাচাইবাছাই করছি আমরা। খুব শিগগির এটার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর