বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চমক ছাড়াই বিএনপির ১০ দফা

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৬:২৩

দীর্ঘ বক্তৃতাপর্বের মাঝামাঝি সময়ে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুহিম ফারহানা জানান, তাদের দলের সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন। রোববারই জমা পড়বে তাদের পদত্যাগপত্র। এটিই মূলত গোলাপবাগ সমাবেশের সবচেয়ে বড় ঘোষণা।

১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ থেকে যে ১০ দফা ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে কোনো চমক বা নতুনত্ব নেই। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব দাবি জানানো হচ্ছিল, তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোই। এমনকি যুগপৎ আন্দোলনের যে রূপরেখা ঘোষণার কথা নেতারা জানিয়ে আসছিলেন, সেটিও হয়নি।

জনসভাস্থল নিয়ে নানা নাটকীয়তা শেষে শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে এই সমাবেশ হয়। এতে জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির সাতজন সদস্যের পদত্যাগ ছাড়া বাকি বক্তব্য আগের ৯টি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই এসেছে।

এই কর্মসূচি থেকে বড় কোনো কর্মসূচি আসার বিষয়ে যে আলোচনা ছিল, সেটিও হয়নি। এক নেতার বক্তব্য উঠে এসেছে, গোলাপবাগের কর্মসূচি গা গরমের মতো, ‘আসল যুদ্ধ’ আসছে পরে।

সমাবেশ শেষে ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের ডাক দেয়া হয়েছে। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর বিএনপি আরও একটি মিছিল করবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবিতে।

এমনকি যুগপৎ আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়ে যেসব দলের সঙ্গে আলোচনা করছিল, তারাও এই সমাবেশে যোগ দেয়নি, যদিও আগের বিকেলে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের গোলাপবাগে অংশ নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছিল।

বিএনপির এই সমাবেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে, যদিও নেতা-কর্মীরা আগের দিন বিকাল ৪টার পর থেকেই ময়দানে যেতে থাকেন।

দীর্ঘ বক্তৃতাপর্বের মাঝামাঝি সময়ে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুহিম ফারহানা জানান, তাদের দলের সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন। রোববারই জমা পড়বে তাদের পদত্যাগপত্র।

পরে সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঘোষণা করেন তাদের ১০ দফা দাবি।

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের একাংশ

কী আছে ১০ দফায়

# বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

# ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

# নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।

# খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।

# ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা।

# বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের সিদ্ধান্তই গোলাপবাগ সমাবেশ থেকে আসা সবচেয়ে বড় ঘোষণা। এই ঘোষণা দেন বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা

# নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা।

# বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

# গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।

এবং

# আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।

‘গোলাপবাগ ওয়ার্মআপ, শেষ যুদ্ধ আসছে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ঢাকায় তারা যে সমাবেশটি করেছেন, সেটি গা গরমের। সামনে ‘শেষ যুদ্ধ’ হতে চলেছে, আর সেই যুদ্ধে বিএনপি জয়লাভ করবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ১০ টা মিটিং করেছি। আজকে শেষ মিটিং। এই মিটিংকে আমরা বলব, আমরা ওয়ার্ম ওয়া্র্ক করেছি। আজকের সমাবেশ থেকে আমাদের প্রধান অতিথি সরকার পতনের ১০ দফা ঘোষণা করবেন। পরবর্তী কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা হবে। তারপর থেকে শুরু হবে রাজপথের সংগ্রাম। এর পরে হবে আমাদের শেষ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করব।’

তিনি বলেন, ‘গত ৭ তারিখে আমাদের ওপর সরকারের কর্মচারীরা যে হামলা করেছে, তা ১৯৭১ সালেব ২৫ মার্চের হানাদার বাহিনীর হামলার থেকে কম কিছু না। আমরা বলতে চাই, ক্ষমতা বেশিদিন থাকবে। ইতিহাস পড়েন। শিক্ষা নেন।

'মানুষ ক্ষেপে গেছে, যত বাধায় দেন, যত গুলিই করেন, মানুষের কাছে সেটা কিছুই না। যার কারণে কাল অনুমতি পাওয়ার পরপর এই মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল।'

ঢাকা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে অংশ নেন

১০ দফার ঘোষণার পর বিএনপি আর পিছু হটবে না জানিয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করে, আহত করে, নিহত করে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। আমাদের কেউ ভয় পায়নি।

'চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল। এই মাদল কে বাজাচ্ছে? এই মাদল বাজাচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই মাদল বাজাচ্ছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আপনারা সেই ছন্দে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আপনারা উজ্জীবিত হয়েছেন। এটি ধরে রাখুন। সামনে কাজে লাগব।

‘তারা আমাদের যতই খেলে দেয়ার চেষ্টা করুক। এবার কেউ পিছু হটবে না। আজকের ঘোষণার পর এক দফা আন্দোলনে যাব। জনগণকে নিয়ে সরকার পতনের লড়াই করে যাব।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে ঢাকায় হরতাল পালন হচ্ছে। এই হরতাল ডেকেছে সরকার। বাস নাই গাড়ি নাই। থমথমে। কী বুঝলেন?

'এই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হাতে মাল নিয়ে পিকেটিং করছে। এই মাল মানে বোঝেন? এই মাল হলো অস্ত্র। তারা ঢাকার এন্ট্রি গেটে পিকেটিং করছে।’

তিনি বলেন, ‘এই পিকেটিং মানুষ কখন করে? হরতাল কখন করে? সরকার কী আছে? সরকার নেই। বাংলাদেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না।’

১০ দফা ঘোষণা এলে বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা করতে বাধ্য করার কথাও বলেন তিনি।

বিএনপি এই সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না গিয়ে অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ার পর বুধবার পুলিশের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ।

এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানে যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচ শ নেতা-কর্মীকে, যাদের মধ্যে আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সেদিনের সেই ঘটনার পর সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ আসে আলোচনায়। তবে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গভীর রাতে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার পর বুধবারের সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সমাবেশের আগের দিন বেলা তিনটার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের আলোচনায় ঠিক হয় গোলাপবাগে হবে বিএনপির সেই জনসভা।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিকভাবে যে সমাবেশ করে আসছে, তার শেষ কর্মসূচি হিসেবে হলো এই জমায়েত।

প্রথমে চট্টগ্রাম, এরপর ময়মনসিংহ, তারপর খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা এবং রাজশাহীতে হয় এই সমাবেশ।

এ বিভাগের আরো খবর