বেলা সাড়ে ১১টা। রাজধানীর বাংলামোটর থেকে মগবাজারের দিকে যাচ্ছে ছোট্ট একটি মিছিল। স্লোগান চলছে, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার।’
সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিন আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট কোনো জমায়েত বা গণমিছিলের অংশ হিসেবে এই নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নামেননি।
শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন রাজধানীর অলিগলিতে পাহারায় থাকার যে ঘোষণা, তার অংশ হিসেবে বের হয় এই মিছিল।
কেবল এই এলাকায় নয়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এই ছোট ছোট মিছিল চোখে পড়েছে এলাকায় এলাকায়।
দুপুরের আগে তেজগাঁওয়ে টেক্সটাইল কলেজসংলগ্ন লাভ রোডে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের। তারাও কিছুক্ষণ পরপর স্লোগান দিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করছিলেন।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ১২ অক্টোবরের পর থেকে প্রতি শনিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি হিসেবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জমায়েতের দিন ঢাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা আওয়ামী লীগের। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার এই দিনটিতে এলাকায় এলাকায় পাহারায় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ এ অবস্থান নিয়ে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারাও কিছুক্ষণ পরপর ছোট ছোট মিছিল করছিলেন। বলছিলেন, বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতে চাইলে কড়া জবাব দেবেন তারা।
এভাবে প্রতিটি এলাকার পাশাপাশি ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সামনেও দেখা গেছে সতর্ক অবস্থান। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি রাজপথে আছেন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।
সকাল ৬টা থেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
নিউজবাংলাকে মায়া বলেন, ‘পুরো ঢাকা শহরেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক পাহারায় আছে। বিএনপি-জামায়াতকে বিশ্বাস করাও পাপ। ওরা যে কোনো মুহূর্তে মানুষের জানমালের ক্ষয় করতে পারে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেবে।’
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সেখানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম সমাদ্দার বাপ্পি নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার থেকেই তারা সেখানে আছেন। কিছুক্ষণ আগে বড় আকারের মিছিলও করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যাতে নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ পাহারায় আছে।’
মিরপুর-১ নম্বরে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের নেতৃত্বে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরাও।
গাবতলীতে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল।
দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে যান সকাল ৭টার দিকে।
বিএনপির জনসভার কয়েক কিলোমিটার দূরে ডেমরা সুলতানা কামাল সেতুর প্রান্তে অবস্থান নিয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল।
গোলাপবাগে বিএনপির জমায়েতের দিন জনসভা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। সাভার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সেই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।