লালমনিরহাট জেলায় মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা-মাল্টা চাষে সফল একরামুল হক। শহরের পাশেই বিমান বাহিনীর পরিত্যক্ত প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে কমলা ও মাল্টা চাষ করেছেন তিনি।
তিনি এমনিতে নার্সারি মালিক। ২০১৮ সালে সেই ব্যবসার পাশাপাশি গড়ে তোলেন এই বাগান। এখানে চাইনিজ কমলা, বারি-১ ও মাল্টার চাষ করেছেন।
শীতের আগে আগে এসেছে ফলন। গাছে ঝুলতে থাকা ফল চোখেও ছড়ায় তৃপ্তির আভা। এখান থেকে ফল লালমনিরহাটের মানুষ ছাড়াও খাচ্ছেন ঢাকার বাসিন্দারাও।
একরামুলের বাগানের কমলা। ছবি: নিউজবাংলা
একরামুল বলেন, ‘মানুষের ও কৃষিবিদদের ধারণা ছিল ঠান্ডা আবহাওয়া, পাহাড়ি অঞ্চল, বালু, নুড়ি পাথর ও চুনামাটি সমৃদ্ধ অঞ্চল ছাড়া মিষ্টি সুস্বাদু কমলা ও মাল্টা চাষ সম্ভব নয়। কিন্তু সেই ধারণা আমি পাল্টে দিয়েছি। গত বছর ৭০ লক্ষ টাকার বিক্রি করেছি।’
দাম কেমন পান, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিন হাজার দুই শ করে মণ বিক্রি করায় কেজিতে পড়ছে ৮০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বাজারে এক শ বা ১২০ ২০ করে বিক্রি করছেন। বাইরে থেকে যেসব ফল আসে সেগুলো কোল্ড স্টোরেজে রাখতে হয় এবং বাজারে আড়াই শ থেকে তিন শ টাকায় বিক্রি করছেন। ’
জেলার দুরাকুটি এলাকার আবদুল হালিম বলেন, ‘কাছাকাছি বাগান হওয়ায় আমরা বাগানে গিয়ে কমলা-মাল্টা কিনে বিক্রি করতে পারতেছি। বুড়িমারী বা অন্য জায়গা হতে আনতে গেলে অনেক সময় ব্যয় হতো, খরচও হতো বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক সমস্যা হতো ।এখন আর দূরে যেতে হয় না।’
কমলা-মাল্টা চাষে সফল একরামুল হক। ছবি: নিউজবাংলা
এই সাফল্য বাণিজ্যিক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে অন্যদেরও।
একরামুল জানান, সেখানে প্রথমে দুই একর এবং পরে আরও চার একর জমিতে চাষ করেছেন তিনি।
এই বাগান সফল হওয়ার পর নীলফামারীতে গড়ে তুলেছেন আরও একটি। সেখানে এক বছর আগে ৫০ একর জমিতে গাছ রোপন করেছেন। সেখানে কমলা ও মাল্টার পাশাপাশি চাষ হচ্ছে স্ট্রবেরি ও পেয়ারা চাষের চিন্তাও করছেন। এ জন্য লিজ নিতে জমি খুঁজছেন।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ৫১ হেক্টর জমিতে কমলা ও মাল্টার চাষাবাদ হচ্ছে। ৪৮ হেক্টর জমিতে বারি মাল্টা-১ এবং আড়াই হেক্টর জমিতে খাসিয়া মাল্টা ও কমলার চাষ হচ্ছে। এগুলোর ফলন বেশ ভালো এবং কৃষকরা সন্তুষ্ট।
একরামুলের বাগানের মাল্টা ও কমলা বেশ সুস্বাদু বলেও জানান তিনি। বলেন, তাকে দেখে এ জেলার অনেকেই এই ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফলও ছড়াচ্ছে।