বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গোপনে ভেঙে ফেলছেন ঠিকাদার

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:১২

নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগে খুলনার ফুলতলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম ঢাকতে গোপনে নির্মীয়মাণ ঘরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলছে ঠিকাদার।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে খুলনার ফুলতলা উপজেলার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ ঘরে নিম্নমানের উপকরণ ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং শিডিউলবহির্ভূতভাবে ঘর তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শনের পরপরই বদলি হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।

নতুন ইউএনও যোগদানের পর বন্ধ করে দিয়েছেন নির্মাণকাজ। এদিকে সরকারি ছুটির দিনে গোপনে নির্মীয়মাণ ঘরের বিভিন্ন অংশ ঠিকাদার ভেঙে ফেলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফুলতলা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দামোদর ও আলকা মৌজায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২ কোটি ৭৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ৬৬ একর জমি কেনা হয়। ওই জমিতে গৃহহীন ও ভূমিহীন ৭০টি পরিবারের আবাসনের জন্য ২ শতাংশ জমিসহ ৭০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার।

নকশা অনুযায়ী প্রতিটি বাড়িতে সাড়ে ১৯ ফুট বাই ২২ ফুট ৮ ইঞ্চি আকারের দুই কক্ষ, মূল ঘরের সঙ্গে বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেট থাকবে। এর জন্য ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা ছাড়াও মালামাল পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এ প্রকল্পে সভাপতি থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া সদস্য থাকবেন এসি ল্যান্ড, উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

প্রকল্প সভাপতি নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেন বোরহান ট্রেডার্সের মালিক ফুলতলার বুড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের শেখ বোরহান উদ্দিনকে। সদ্যোবিদায়ী ইউএনও সাদিয়া আফরিনের তত্ত্বাবধানে গত ১ নভেম্বর এ ঘরের নির্মাণ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ২০টি ঘরের গাঁথুনি ও পলেস্তারা শেষ হয়ে ১০টি ঘরের লিংটন পর্যন্ত এবং ৫টি ঘরের গ্রেড বিমের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

তবে গত মঙ্গলবার ওই উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) পরিবর্তন করা হয়। নবাগত ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মীয়মাণ ঘর পরিদর্শনে গিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রডের ব্যবহার দেখার উদ্দেশ্যে একটি গ্রেড বিম ভাঙতে নির্দেশ দেন। তখন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতেই ঢালাই গুঁড়া হয়ে গ্রেড বিমের ভেতরের রড বেরিয়ে আসে। তিনি দেখতে পান, ১২ মিলিমিটারের পরিবর্তে ১০ মিলিমিটার রড এবং ৬ ইঞ্চি দূরত্বের রিং আড়াই ফুট দূরত্বে গাঁথা হয়েছে। ঠিক একই অবস্থা ঘরের পিলার ও লিংটনের। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।

খুলনায় গোপনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ঠিকাদার ভেঙে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছবি: নিউজবাংলা

এর আগে নির্মীয়মাণ ঘরে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৩ নভেম্বর খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পুলক কুমার মণ্ডল সরেজমিনে এসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দেখতে পান। এ ছাড়া ১৪ নভেম্বর বিকেলে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম ঘরের কাজের অগ্রগতি ও নির্মাণকাজ দেখতে যান।

নির্মাণসামগ্রী ও কাজের ব্যাপারে ওই সময়ের প্রকল্প সভাপতি ইউএনও সাদিয়া আফরিন নিম্নমানের ইটের কথাটি স্বীকার করে বলেন, খারাপ ইট ফেরত দিয়ে ভালো ইট আনা হয়েছে। এ সময় কাজের মান নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’

তবে প্রশাসনের ঘর নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শনের কয়েক দিন পরই ওই উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বদলির আদেশ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। তাতে ইউএনওকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বলা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে ঠিকাদারের নিজস্ব লোকের প্রহরায় গোপনে শাবল ও হাতুড়ির মাধ্যমে নির্মীয়মাণ কিছুসংখ্যক ঘরের পিলার, লিংটন ও গ্রেড বিম ভাঙা হচ্ছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা মাকিদ সরদার বলেন, ‘সঠিক তদারকির অভাবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং পরিমাণের তুলনায় কম নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। আবার নির্মাণকাজ চলার সময় আশপাশের কোনো লোককে প্রকল্পের ধারেকাছে আসতে দেয়া হয় না। দুই দিন ধরে দেখছি, নির্মাণ করা ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস মৃনাল হাজরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সোচ্চার থাকার দাবি জানাচ্ছি।’

প্রকল্পের সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ফাউন্ডেশনের ট্রেনিংয়ের বাইরে ছিলাম, যে কারণে কাজের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। গত সপ্তাহে কর্মস্থলে যোগদান করেছি। চলতি সপ্তাহে কমিটির মিটিং এবং কাজের দেখভাল করা হবে।’

প্রকল্পের সদস্যসচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প সভাপতি ইউএনও সাদিয়া আফরিন কমিটির মিটিং ছাড়াই এমনকি আমাকে বাদ দিয়েই মৌখিকভাবে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি এবং ঠিকাদার মিলেই নির্মাণসামগ্রী ক্রয়সহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।’

সদ্যোবিদায়ী ইউএনও সাদিয়া আফরিন মুঠোফোনে বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সব ঘর নিয়মমাফিক ও মানসম্মত ছিল। বদলি হয়ে আসার পর নির্মাণের বিষয়টি কেমন হয়েছে আমার জানা নেই।’

তিনি ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্ধারিত কমিটি যাচাই-বাছাই করে মালামাল কিনেছে।’

প্রকল্পের ঠিকাদার শেখ বোরহান উদ্দিন নির্মাণকাজে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট লেবার ও মিস্ত্রিদের ভুলে কাজে সঠিক নিয়ম রক্ষা করা হয়নি। সে কারণে নিজ দায়িত্বে কিছু ঘরের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ঠিকাদার বলে কিছুই নাই। দায়িত্ব নেয়ার পর গত বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রাথমিকভাবে দেখে এসেছি। এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না। রোববার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ তদারকি করব।’

এ বিভাগের আরো খবর