বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। নয়াপল্টনের পরিবর্তে নতুন সমাবেশস্থল নির্ধারণের পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে আশপাশের এলাকা। পুরোদমে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। এরপর মাইক লাগানোর কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিএনপির নেতা-কর্মীরা গোলাপবাগ ছাড়িয়ে ধলপুর, মানিকনগর ও সায়েদাবাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছেন।
এরইমধ্যে মহানগর বিএনপির তত্ত্বাবধানে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। রাত সাড়ে ৭টায় শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণ। মাঠের পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন মঞ্চের কাজে ডেকারেটরের লোকজন ছাড়াও দলীয় কর্মীরাও সহযোগিতা করছেন।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক নেতা জানান, রাত ১২টার পর থেকে মাইক লাগানোর কাজ শুরু হবে।
তবে সমাবেশ প্রাঙ্গণে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে নারী কর্মীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
সমাবেশস্থল ঘুরে বিপুলসংখ্যক নারী কর্মীকে দেখা যায়। তাদের একজন সানজিদা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, গত সপ্তাহে ঢাকায় এসেছি। এক বান্ধবীর বাসায় ছিলাম। আজ বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে আছি। সবই ঠিকাছে, তবে টয়লেটের প্রয়োজন ছিল।
এ রিপোর্ট লেখা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যারা মাঠে ঢুকতে পারছেন না তারা মূল সড়কেই অবস্থান নিচ্ছেন।
সমাবেশস্থলে বগুড়া থেকে আসা বিএনপি কর্মী লিয়াকত মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকা থিকা আমরা প্রায় আড়াই হাজার লোক আইছি। আরও আসতেছে। যত বাধাই আসুক ত্যাগী কর্মীরা মাঠ পর্যন্ত পৌঁছাবেই।’
পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘তারেক রহমানের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দিয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন।
নেতা-কর্মীদের মিছিলের কারণে মাঠের সামনের সড়কে যানজটও দেখা দিয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টন নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, এ নিয়ে বিরোধের মধ্যে আলোচনায় আসে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের স্থল ঠিক হয় গোলাপবাগ মাঠ।
রাজধানীর এক প্রান্তে সায়েদাবাদ ঘেঁষা বড় এই মাঠটি নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করে সেখানে জমায়েতের বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার বেলা ১১টায় শুরু হবে তাদের জমায়েত। এই সমাবেশ সফল করে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করবে বলেও আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখেন তিনি।
তবে বিএনপি এ সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নয়াপল্টনেই জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে বুধবার ব্যাপক সংঘর্ষ হয় সেখানে। প্রাণ হারান একজন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এসে পুলিশের নিষেধ সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। বলেন, তারা যাবেন, জনগণও যাবে। বাধা এলে জনতাই সিদ্ধান্ত নেবে, তারা কী করবে।
তবে রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বরফ গলার উপক্রম হয়। সিদ্ধান্ত হয় বিএনপি কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করবে।