খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর এখন করুণ দশা। প্রতিষ্ঠার আট বছর পেরিয়ে গেলেও বিসিক শিল্পনগরীতে ফিরছে না প্রাণ। বাহির থেকে দেখে বোঝার উপাই নেই, আসলে এটি বিসিক শিল্পনগরী, নাকি গাড়ি চালনা শেখার মাঠ, নাকি গরু-ছাগলের চারণভূমি।
প্লট বরাদ্দ নিয়ে জায়গা দখল করে বাগান করে ফেলে রেখেছেন উদ্যোক্তারা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যক্রম শুরু করছেন না তারা।
প্লট বরাদ্দ নিতে আগ্রহ নেই নতুন উদ্যোক্তাদের। তাদের অভিযোগ, মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর পরিবেশ শিল্পবান্ধব নয়। বিদ্যুৎব্যবস্থা থেকে শুরু করে ড্রেনেজব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তাও নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও এখানে অনেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছেন না।
বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ নিয়ে যেসব উদ্যোক্তা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে পুলিশলাইনের সামনে খেড়ের মাঠ নামক জায়গায় ১০ একর জমির ওপর ২০০৬ সালে ৭০টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করে মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরী। এ সময় ৩৫টি শিল্প ইউনিটের জায়গায় ৬৮টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর খালি রয়েছে ২টি ইউনিট। সেখানে ২৭ হাজার বর্গফুট জায়গা খালি পড়ে আছে। প্রতি শতাংশ জমির মূল্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে।
বতর্মানে বিসিক শিল্পনগরীতে চালু রয়েছে ৯টি কারখানা। তবে তা চলছে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
বিসিক শিল্পনগরীর শর্ত অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ নেয়ার ১৮ মাসের মধ্যে উৎপাদনে যেতে হবে। এ শর্তকে তোয়াক্কা না করে প্লট বরাদ্দ নেয়া উদ্যোক্তারা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে তার মধ্যে গাছ লাগিয়ে বাগান করে ফেলে রেখেছেন।
মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরী
খোলা জায়গায় গরু-ছাগল বেঁধে রাখার ফলে বিসিকের জায়গা এখন চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীর পাশে থাকা টিটিসি ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষণ গাড়িগুলোর প্রশিক্ষণ চলছে বিসিকের সীমানার মধ্যে থাকা নির্মীয়মাণ সড়কে। সড়কেরও কার্পেটিং উঠে গেছে।
লতা-পাতা আর জঙ্গলে ভরে গেছে বিসিক নগরীর খালি প্লটগুলো। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীদের আড্ডা বসে এখানে।
অপূর্ব চানাচুর কোম্পানির স্বত্বাধিকারী আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের বড় সমস্যা, এরা ঠিকমতো আসেন না। বিসিক কর্মকর্তারা আমাদের চিঠি দেন, কিন্তু উদ্যোগ নেন না। আমরা হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। সব ইউনিট চালু হলে এখানে প্রাণ ফিরবে।’
আল মদিনা স্টিল ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী হাশেম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা প্লট নিয়েছেন, তারা বাউন্ডারি দিয়ে গাছ লাগিয়ে জঙ্গল বানিয়েছেন। সম্প্রতি বিসিকের সামনের দিকের জঙ্গল কেটেছে। অন্যদিকে জঙ্গল আছে। বিসিক কর্মকর্তারা দেখে যান, কিছুই করেন না।’
নতুন উদ্যোক্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পার্কিং টাইলসের ব্যবসা করি। আমার টাইলস কারখানা গ্রামের মধ্যে। সেখান থেকে টাইলস বানিয়ে শহরে নিয়ে এসে ব্যবসা করতে খরচ বেড়ে যায়। তাই আমি ভাবলাম বিসিকের মধ্যে অনেক সরকারি জায়গা পড়ে আছে, সেখানে জায়গা পেলে আমাদের খরচ কমে যাবে এবং দ্রুত শহরের মধ্যে মাল ডেলিভারি দিতে পারব। অথচ এখানে এসে খোঁজ নিয়ে দেখি, কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। অথচ বাস্তবে দেখি সব জায়গাই ফাঁকা পড়ে আছে।’
মেহেরপুর চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল এনাম বকুল বলেন, ‘বিসিক কর্মকর্তা আর উদ্যোক্তাদের মাঝে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ বিসিক। সেই সঙ্গে যেসব উদ্যোক্তা অর্থসংকটের কারণে ব্যবসা চালু করতে পারছেন না, তাদের যদি ঋণ দেয়া হয়, তাহলে তারা শিল্প চালু করতে পারবে।’
মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম খলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগরী অনেক দিন ধরে পতিত হয়ে আছে। সেখানে কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। ইতোমধ্যে শিল্প ইউনিটের মালিকদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং সেখানকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান করা হবে। তা ছাড়া শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে অর্ধকোটি টাকার বেশি সার্ভিসচার্জ বকেয়া আছে।
‘বিসিক শিল্পনগরী সব সময় নতুন উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানায়। মেহেরপুর বিসিক শিল্পনগরী খুব দ্রুত সময়ে প্রাণ ফিরে পাবে এবং এটি সম্ভাবনাময় শিল্প এলাকা হিসেবে এগিয়ে যাবে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’