বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ঢাকায় মরক্কোর রাষ্ট্রদূতের বাসায় বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈঠক করেছেন ২৮ বিদেশি রাষ্ট্রদূত।
গুলশানে মরক্কোর রাষ্ট্রদূতের বাসায় বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনীতিক সূত্র।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মন্তব্য করা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না সেখানে।
বৈঠকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাদের দাবি বিকেলের এই জমায়েত ছিল নিয়মিত ‘চা চক্র’-এর অংশ। তবে একটি সূত্র বলছে, সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র নিউজবাংলাকে বলেন, মরক্কোর রাষ্ট্রদূত বর্তমানে কূটনৈতিক কোরের ডিন। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, চীনের রাষ্ট্রদূত জি লিমিং ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা তুরানের দায়িত্ব পালন শেষ হওয়ায় মরক্কোর রাষ্ট্রদূত তাদের সম্মানে চা চক্রের আয়োজন করেছিলেন তবে সবাইকেই দাওয়াত দেয়া হলেও অনেকেই আসতে পারেননি। আবার চীনের রাষ্ট্রদূতও বৈঠকে আসেননি।
মরক্কোর রাষ্ট্রদূতের বাসায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণব ভার্মা, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তোফা ওসমান তুরান, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার জেরেমি ব্রায়ার, নরওয়েরে রাষ্ট্রদূত ইসপেন রিখটার সেভেনডেসন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মাসদুপে, ইতালির রাষ্ট্রদূত এনরিকো নান জিয়াটা, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ড্রা ব্রেগ ভন লিন্ডে, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ ই আল দুহাইলান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আল হামোদি, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান, কসোভোর রাষ্ট্রদূত গানার উরায়া, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি, ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুনশালি, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত পেহম ভিয়েত চেইন, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পাক সং ইউপ, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জায় কুনও এতে যোগ দেন।
এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রদূত মানসোলর চেভোসি, ইরাকের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্দুস সালাম, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হারটেন্তো সুবোলো, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ম্যাকোদি সুমতমোর, ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত মারিনকো অ্যান্তোলোভিক, লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালিব এসএম সুলায়মান, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাজনাহ বিন্তি মোহাম্মাদ হাশিম, ও সিঙ্গাপুরের অনারারি কনসাল শিলা পিল্লাই কুলাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে মঙ্গলবার বিবৃতি দেয় ঢাকায় পশ্চিমা ১৪টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান। এই বিবৃতিতে মিছিল-মিটিংসহ গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়।
মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে দেয়া ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমরা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভূমিকাকে তুলে ধরতে চাই।
‘আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদযাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি।
‘বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী। আমরা মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।’
বিবৃতি দেয়া মিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশন, ব্রিটিশ হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, ডেনমার্ক দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন, ফরাসি দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস, ইতালির দূতাবাস, জাপান দূতাবাস, নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস, নরওয়ের দূতাবাস, স্পেনের দূতাবাস, সুইডিশ দূতাবাস, সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।