রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার বিএনপি নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং অনেকে আহত হন। সংঘর্ষের পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দাবি করেছেন- বিএনপি নেতা-কর্মীরা মারমুখী অবস্থানে ছিল। হঠাৎ করেই পুলিশ সদস্যদের ওপরে ঢিল ছোড়ে। বিভিন্ন ধরনের পটকা ফুটিয়ে আওয়াজ সৃষ্টি করে তারা।
বৃহস্পতিবার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সেদিন আমার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সমাধান করতে বলেছিলাম। আমরা দুপুরে একটা মিটিং করছিলাম। আমাদের আইজিপি, সিনিয়র সচিব অনেকেই সেখানে ছিলেন। কী ঘটছিল, তা আমরা জানতাম না।
হঠাৎ শুনলাম, তারা (বিএনপি নেতা-কর্মী) মারমুখী আচরণ করছে। আমাদের পুলিশ সদস্যদের ওপর ঢিল ছুড়ছে। বিভিন্ন ধরনের পটকা ফুটিয়ে তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশ অত্যন্ত নির্ভীক। তারা দায়িত্বে অটল। ঘটনার পর তারা একত্রিত হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছিলেন। সেই মোকাবিলার সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ৪৯ জন পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৫ জন ভর্তি রয়েছেন। এই হাসপাতালে একজন আছেন যার মাথায় ৪৮টি সেলাই পড়েছে। তিনি ক্রিটিক্যাল পজিশনে রয়েছেন। ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় কোপানো হয়েছে। ‘ঢাকা মেডিক্যালে একজন আছেন। অন্য যারা আছেন, তাদের অধিকাংশ বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়েছেন কিংবা লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন। অনেকের শরীরে পেটানোর দাগ রয়েছে। এ রকমভাবে তারা আমাদের পুলিশ সদস্যদের আহত করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ মব ডিসপাস করার জন্য টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। তারপর বাধ্য হয়ে রাবার বুলেট ছুড়েছে। কোথা থেকে বোমা এসেছে তা দেখতে পুলিশ সদস্যরা একযোগে বিএনপির পার্টি অফিসের ভেতরে যায়।
‘সেখানে অনেক চালের মজুত ছিল। পানি ছিল। অনেক চিনি ও ডালের মজুত ছিল। সেখানে ১৫টি হাতবোমা পাওয়া গেছে। যেগুলো অবিস্ফোরিত ছিল। ছুরি-কাঁচি এগুলোও পাওয়া গেছে। রান্না অবস্থায় খিচুরি পেয়েছি। এগুলো আনার পেছনে কারণটা কী?’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘তারা (বিএনপি নেতা-কর্মী) সড়কে অবস্থান নেবে কিনা জানতাম না। তবে এখন শুনছি, তারা বসে পড়ার জন্য এসব রসদ মজুত রেখেছিল। এর বেশি কিছু জানি না।’
বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দলের কর্মসূচি করেন কোনো আপত্তি নেই। আপনারা ভাঙচুর করবেন, জান-মালের ক্ষতি করবেন, আমাদের পুলিশ চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। তাদের দায়িত্ব হলো জান-মালের প্রোটেকশন দেয়া। এই কাজ করতে গিয়ে আপনারা দেখেছেন কত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবু তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।’
সমাবেশস্থল নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সারা দেশে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব জায়গায় সমাবেশ করেছে। আমরা কোথাও বাধা দেইনি, অসহযোগিতা করিনি। ঢাকায় তারা বিরাট সমাবেশ করবে বলেছিল। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসে যে তারা অন্তত ২৫ লাখ লোক ঢাকায় আনবে।
'আমরা বললাম, ঢাকায় তো এমন মাঠ নেই। তারা আমাদের কাছে প্রথমে চেয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সংসদ ভবনের সামনে ও তাদের অফিসের সামনে। সংগত কারণেই পুলিশ কমিশনার নয়াপল্টনে দেননি। রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকায় একটা অচল অবস্থা তৈরি হবে। সে কারণে কমিশনার অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সংসদ ভবনের সামনে কাউকে সমাবেশ করতে দেয়া হয় না।'
তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৮ ডিসেম্বর আমাদের একটা সমাবেশ ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগকে কর্মসূচি এগিয়ে আনার কথা বলেন। সেভাবেই হয়েছে। এরপর মাঠ ফ্রি ছিল। আমরা বলেছি, আপনারা আসুন। যত সমর্থক আসবে, আসুক। তারা এখানে না থেকে বার বারই পল্টনে পার্টি অফিসের কথা বলছিলেন।’
বিএনপিকে বিকল্প ভেন্যুর কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিকল্পের কথা বললাম, ঢাকা শহরে আরও বড় বড় মাঠ আছে। সেখানে সমাবেশ করলে ট্রাফিক সচল থাকবে।
কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি সমাবেশ করবে না। বিকল্প ব্যবস্থা না করে দিলে নয়াপল্টনেই বিএনপি সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে।’
পরিস্থিতি নাজুক কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি নাজুক বলে মনে করি না। তবে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। একগুঁয়েমি ছেড়ে সোরাওয়ার্দী ময়দানে আসুক, বিরাট সমাবেশ করুক। আমাদের কমিশনারের সঙ্গে বসুক। বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে তারা জানালে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।’
নয়াপল্টনই চায় বিএনপি
এদিকে সংঘর্ষের পরও বিএনপি নয়াপল্টনেই বিভাগীয় সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য বিকল্প না এলে সেদিন সকালে জনগণ নয়াপল্টনেই যাবে। যদি বাধা আসে, তাহলে জনগণই ঠিক করবে তারা কী করবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে, কোনো সমাবেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। এখানেও হওয়ার কারণ ছিল না। যা হয়েছে, তার জন্য সরকারই দায়ী।
এর আগে বুধবার বিকেলে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহতসহ অনেক আহত হন। সংঘর্ষের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে অন্তত ২১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি আছে জানিয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
আসামিদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
এদিকে মতিঝিল থানায় সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহানপুর থানায় পুলিশ আরেকটি মামলা করেছে, যাতে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ২০০ থেকে ২৫০ জন।