বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে সমাবেশের আগেই দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর ওইদিন গণপরিবহন চলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় শনিবার ঢাকা, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এদিন বিকেলে ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে সমিতির নিজস্ব কার্যালয়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসেন ঢাকার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান টিবিসি রোড ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের মালিক-শ্রমিক নেতাসহ ঢাকার সব পরিবহন কোম্পানির প্রায় ৩০০ মালিক-শ্রমিক।
বিস্তারিত আলোচনা শেষে ১০ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকা, শহরতলী এবং আন্তঃজেলা রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
যান চলাচল যাতে কোনো প্রকার বাধার মুখে না পড়ে সেজন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদারে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি।
তবে এর আগে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন যে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলাচলের বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
পরিস্থান পরিবহনের চারটি বাসের মালিক নাজির হোসেন নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ‘উপর থেকে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। ওইদিন ঢাকা শহর যদি বাস চলাচলের উপযুক্ত থাকে, তাহলে আমরা বাস চালাব। আর পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে বাস চালাব না। কারণ একটা বাসের অনেক দাম। আমি তো আর চাইব না বাসের ক্ষতি হোক।’
শিকড় পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজালাল নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা পাইনি। যদি মালিক সমিতি বাস বন্ধের নির্দেশনা না দেয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং বাস চলাচলের পরিবেশ থাকে তাহলে আমরা বাস চালাবো।’
দূরপাল্লার বাস চলবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমাদের কোনো ধর্মঘট বা নিষেধাজ্ঞা নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের বাস চলবে।’
হানিফ এন্টারপ্রাইজের ঢাকা-বরিশাল রুটের ম্যানেজার কোরবান আলী ভুলু বাস বন্ধের কোনো মেসেজ নেই বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি চলছে, চলবে। কিন্তু যাত্রী খুবই কম। যে রুটে বাস যায় ১০টা, সেই রুটে যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন যাচ্ছে ৩টা। তবে বাস বন্ধ হচ্ছে না।’
বুধবার বিকেলের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
সংঘর্ষের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে অন্তত ২১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাত আসামি আছে জানিয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
আসামিদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
এদিকে মতিঝিল থানায় সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
এ মামলায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহানপুর থানায় পুলিশ আরেকটি মামলা করেছে, যাতে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ২০০ থেকে ২৫০ জন।