১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিভাগীয় সমাবেশের দিন থেকে সরকার পতনের দাবিতে সড়কে অবস্থান নেয়ার কোনো পরিকল্পনা যে বিএনপির নেই, সেটি স্পষ্ট করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এই জনসভার স্থল নিয়ে বিরোধের মধ্যে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন ফখরুল। এ সময় নানা প্রশ্নের পাশাপাশি এই গুঞ্জনটি নিয়েও কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব জানান, সরকার ও পুলিশ যা-ই করুক, তারা শনিবার ঘোষিত সমাবেশ করবেনই। তারা সেখানে যাবেন। যদি বাধা আসে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাহলে জনগণই ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থাসহ নানা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি যে বিভাগীয় সমাবেশগুলো করে আসছে, তাতে ১০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত কর্মসূচি হতে পারে- এমন একটি আভাস দিয়েছিলেন বিএনপির নেতারাই।
দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ঘোষণা দেন, সেদিন থেকে দেশ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশেই চলবে। পরে মির্জা ফখরুল এই উত্তেজনায় জল ঢেলে বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর কোনো চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। জনগণের শান্তি নষ্ট হবে, এমন কোনো কিছু করবেন না তারা।
সংবাদ সম্মেলনে একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘বিএনপি ১০ ডিসেম্বর সড়কে বসে যাবে, এ ধরনের একটি প্রচার চলছে। বিএনপি আসলে কী করবে?’
ফখরুল এই প্রচারের পেছনে দায় দেন সরকারি দলকে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই প্রচারে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না এই কারণে যে, জনগণ এটাতে বিশ্বাস করে না। জনগণ বুঝে গেছে আওয়ামী লীগ মিথ্যাবাদী, মিথ্যাচার করে ভুল প্রচার করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যেমন উন্নয়ন বিভ্রম সৃষ্টি করেছে, তেমনি এই গণতন্ত্র বিভ্রম, রাজনীতি বিভ্রম শুরু করেছে। এটা ছাড়া তারা টিকতে পারে না।’
তাহলে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কী বলবে, এমন প্রশ্নে দলের মহাসচিব বলেন, ‘১০ তারিখে আমাদের লাস্ট ডিভিশনাল প্রেগ্রাম। এখান থেকে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ও দাবি তুলে ধরব। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, সংসদের বিলুপ্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বলব।’
বিএনপি নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ প্রত্যাহার, নেতা-কর্মীদেরকে মুক্তি, ‘গায়েবি ও মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার এবং তল্লাশি বন্ধ করার দাবিও জানান।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী- এমন প্রশ্ন ছিল আন্তর্জাতিক এক গণমাধ্যমকর্মীর।
জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এই সরকার অনির্বাচিত। গত দুই সরকার পুরোপুরি ফ্রড, গত নির্বাচনে আগের রতেই ভোট হয়ে গেছে। এমনকি প্রার্থীরা প্রচারে যেতে পারেননি। তাদের আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের হাজারো নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
‘২০১৪ সালে ১৫৪ জন প্রার্থিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের সময় পরিবহন ধর্মঘট নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, ‘এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন, একটি উদার রাজনৈতিক দল যখন একাট শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ঘোষণা করে, তখন সরকারপন্থি পরিবহন ইউনিয়ন ধর্মঘট ঘোষণা করে। বাড়ি থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
‘এবার ঢাকায় তারা বলতে শুরু করেছে, শহরে কোনো সমাবেশ হবে না। কাউকে জমায়েত হতে দেয়া হবে না।…হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। আমরা কর্মসূচি পালন করতে পারছি না। এমনকি গণমাধ্যম এখানে ফ্রি না, বিচার ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
‘বাংলাদেশ এখন কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করছে।’