বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকার সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট, পুলিশের পাশে বৈঠা হাতে টহল

  •    
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:৪১

১৫ দিনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আখ্যা দিয়ে পুলিশ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে রাজধানীজুড়ে অভিযান চালিয়ে আসছে। বাসাবাড়ি, হোটেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে প্রতিদিনই। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের আর বাকি দুই দিন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। এর মধ্যে বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আরও কঠোর হয়েছে বাহিনী। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ রেখে তল্লাশি চলেছে বৃহস্পতিবার দিনভর। পাশাপাশি ঢাকায় প্রবেশের সব পথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

১৫ দিনের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আখ্যা দিয়ে পুলিশ চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে রাজধানীজুড়ে অভিযান চালিয়ে আসছে। বাসাবাড়ি, হোটেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে প্রতিদিনই। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধল্লা শহীদ রফিক সেতু এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশের পাশাপাশি চেকপোস্টে বৈঠা হাতে টহল দিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নাশকতা এড়াতে তল্লাশি চলছে। লোকজনকে সতর্ক করতে আওয়ামী লীগের লোকজন বৈঠা হাতে চেকপোস্টে অবস্থান নিয়েছেন।

তবে পুলিশ এসব কথা নাকচ করে জানিয়েছে, জঙ্গি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই চেকপোস্ট।

সকাল থেকে চেকপোস্টে ঢাকামুখী গাড়িগুলো থামিয়ে চালক-যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ সামনে রেখে কোনো নিরাপত্তার জোরদার করা হয়নি। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে।

‘মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ধল্লা সেতু জেলার প্রবেশপথ হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে তল্লাশির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

ধল্লা ইউপির চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তাদের সেই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সে কারণে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় লোকজনও মাঠে আছে এবং থাকবে।’

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, ‘বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে আছে। মানুষকে সতর্ক করতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে ভয়ভীতি না পায় সে জন্য বৃহস্পতিবার সকালে সিংগাইরসহ বিভিন্ন এলাকায় লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছে।’

সাভারের আমিনবাজার ও মিরপুর-বেড়িবাঁধ সড়কের ধউর ব্রিজ এলাকায় বুধবার দুপুরের পর থেকেই বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে পুলিশ চেকপোস্টে নজরদারি করা হচ্ছে। দূরপাল্লার যানবাহন, বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে কোনো যাত্রীকে হয়রানি করা হচ্ছে না।’

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ হিল কাফি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার ও ধউর এলাকায় দুটি চেকপোস্টে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বাবুবাজার ও পোস্তগলা এলাকাতেও এই কার্যক্রম চলছে। তবে এখনও কেউ আটক হয়নি।’

চেকপোস্ট বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক এলাকায় এবং সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের দুটি চেকপোস্টে যানবাহন থামানো হয়।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। রূপগঞ্জের কাঞ্চন সড়কেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে জানান, ঢাকায় প্রবেশমুখী মহাসড়কের পাশে পাঁচটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরও কয়েকটি বসানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন থানা এলাকায়। এসব চেকপোস্টে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের খোঁজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা রোধে তল্লাশি করা হচ্ছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকার ঢাকামুখী লেনে একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরেকটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে ভুলতায়।

‘কোনো যানবাহনে অবৈধ মালামাল থাকতে পারে কিংবা অস্ত্র থাকতে পারে, তাই সকাল থেকে আমাদের তল্লাশি চলছে। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কিছু পাইনি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘চেকপোস্ট বসানো তো নতুন না, আমরা মাঝেমধ্যেই মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি। সম্প্রতি ঢাকা আদালত চত্বর থেকে কিছু জঙ্গি পালিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি এই মাসে বিজয় দিবস, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট রয়েছে। সাধারণত যেকোনো ইভেন্ট থাকলেই আমরা নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে থাকি।’

সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়ার জন্য এই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির কোনো প্রোগ্রামে বাধা দিইনি। কেউ যদি নাশকতা করার পরিকল্পনা করে তাহলে তো সে পুলিশের তল্লাশি ভয় পাবেই। আমরা তো নির্দিষ্ট করে কোনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছি কিংবা গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি এমন তো না। এটা আমাদের রুটিনওয়ার্ক।’

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের সেতু পেরিয়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথ এটি। একই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন।

টঙ্গী সেতুর উত্তর অংশে টঙ্গী বাজার এলাকায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা থেকে আব্দুল্লাহপুর সড়কে দুইটি, আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের কামাড়পাড়া, বেরিবাঁধ এলাকায় বেশ কয়েকটি তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।

সকাল থেকেই এ পথে ঢাকামুখী সড়কে অন্যান্য দিনের চেয়ে দূরপাল্লাসহ গণপরিবহন অনেকটাই কম ছিল। তল্লাশি চৌকিগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পথচারীদের কাছেও পরিচয়পত্র চাইতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।

ওষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘টঙ্গী থেকে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার নিয়ে ঢাকায় যেতে টঙ্গী বাজার এলাকায় পৌঁছালেই পুলিশ তল্লাশি করে। মোবাইল ফোনের ম্যাসেজ ও কললিস্টও ঘেঁটে দেখে।

‘এটা হয়রানি। আমি পরিচয় দেয়ার পরও তল্লাশি করেছে। মোবাইল নিয়ে মেসেজ দেখেছে।’

নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা শাহজালাল পরিবহনের একটি বাস আব্দুল্লাহপুর পৌঁছালে তাতে তল্লাশি করে পুলিশ। প্রায় ১০ মিনিট তল্লাশি শেষে হাইড্রলিক হর্ন (উচ্চ মাত্রার হর্ণ) থাকায় মামলা দেয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ, উত্তরা বিভাগ) বদরুল হাসান বলেন, ‘জনসাধারণের নিরাপত্তায় আমরা এখানে তল্লাশি করছি। কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। জনগণকে নিরাপত্তায় দেয়ার জন্য আমাদের এ সতর্কতা।

‘ধৈর্য্য ধরে এ সড়ক চলাচলকারী যাত্রীদের উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা।’

চেকপোস্ট বসেছে মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-দোহার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। এসব সড়ক দিয়ে গণপরিবহন চলাচল দিনশেষে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জেলার লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতু টোলপ্লাজার সামনে, শিমুলিয়া ও মাওয়া চৌরাস্তায় দিনভর বাস ও প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। একসঙ্গে ৪-৫ জন দেখলেই পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।

লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতুর টোল সামনে যাত্রী আরমান মিয়া বলেন, ‘বাস চলাচল কম থাকায় হেঁটেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। আমার মতো অনেক যাত্রীর কপালে বাস জোটেনি।’

গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রী আবু জাফর বলেন, ‘গণপরিবহনের সংকটের কারণ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। বাসের দেখা নেই। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম আত্মীয়ের বাসায়। এখন মনে হচ্ছে বাড়িতেই ফিরে যেতে হবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ৩০ টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর ৯০০ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। তবে চেকপোস্টগুলোতে কাউকে আটক করা হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর