বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানিয়েছেন বাস মালিক, ব্যানার মালিক ও পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। তবে পুরো বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তারা বলছেন, যাত্রী কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন রুটে বাস কম চলছে। তবে বাস একেবারে বন্ধ করার চিন্তা এখনও নেই। মালিক সমিতিও গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়নি।
অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসার পর বুধবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত ও অনেকে আহত হন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১০ ডিসেম্বর পরিবহন চলবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজধানীতে ১০ ডিসেম্বর বাস চলবে কিনা জানতে চাইলে পরিস্থান পরিবহনের চারটি বাসের মালিক নাজির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপর থেকে বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। ওইদিন ঢাকা শহর যদি বাস চলাচলের উপযুক্ত থাকে, তাহলে আমরা বাস চালাব। আর পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে বাস চালাব না। কারণ একটা বাসের অনেক দাম। আমি তো আর চাইব না বাসের ক্ষতি হোক।’
শিকড় পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজালাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। যদি মালিক সমিতি বাস বন্ধের নির্দেশনা না দেয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং বাস চলাচলের পরিবেশ থাকে তাহলে আমরা বাস চালাবো।’
দূরপাল্লার বাস চলবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমাদের কোনো ধর্মঘট বা নিষেধাজ্ঞা নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের বাস চলবে।’
হানিফ এন্টারপ্রাইজের ঢাকা-বরিশাল রুটের ম্যানেজার কোরবান আলী ভুলু বাস বন্ধের কোনো মেসেজ নেই বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি চলছে, চলবে। কিন্তু যাত্রী খুবই কম। যে রুটে বাস যায় ১০টা, সেই রুটে যাত্রী কমে যাওয়ায় এখন যাচ্ছে ৩টা। তবে বাস বন্ধ হচ্ছে না।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। মালিকরা তাদের গাড়ি যদি চালাতে চান, চালাতে পারবেন। আমাদের দিক থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস মালিকেরা ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে অস্বস্তিতে আছেন। তারা বাস চালাবেন কিনা সেটা চিন্তা করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
বুধবার বিকেলের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
সংঘর্ষের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে অন্তত ২১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাত আসামি আছে জানিয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
আসামিদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।
এদিকে মতিঝিল থানায় সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
এ মামলায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া শাহজাহানপুর থানায় পুলিশ আরেকটি মামলা করেছে, যাতে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ২০০ থেকে ২৫০ জন।