নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানের দ্বিতীয় দিনও সেটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আগের দিন সেখান থেকে ককটেল উদ্ধারের কথা জানিয়ে পরের দিনও এই অভিযান চলছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ক্রাইমসিন ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেখানে কাজ করবে। তাদের কাজ শেষ হওয়ার আগে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার।
বৃহস্পতিবার ফকিরাপুল মোড়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের অবস্থান আর কত সময় থাকবে- জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, ‘এটা একটা ক্রাইম সিন। কালকে এখান থেকে আমাদের পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে অনেক বোমা, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করতে বাধ্য হই। অভিযানে প্রচুর পরিমাণে ককটেল ও নাশকতা চালানোর মতো সরঞ্জাম উদ্ধার করি।
‘এটি হচ্ছে ঘটনাস্থল, যেটাকে পুলিশের ভাষায় প্লেস অব অকারেন্স বলে থাকি। এই ক্রাইম সিনে সিআইডির টিম, ডগ স্কোয়াড এসে কাজ করবে। আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির বিভাগীয় ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর যে সমাবেশটি ঢাকায় ডাকা হয়েছে, সেই সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে বুধবার নয়াপল্টন হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র।
বিএনপি শনিবারের সমাবেশটি করতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে যেতে রাজি না হয়ে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করার কথা জানায় বিরোধী দলটি। বুধবার সকাল থেকে সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে চলতে থাকে বক্তব্য। দুপুরের পর সামনের সড়কে অবস্থানকারী নেতা-কর্মীদের পুলিশ সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
বিএনপিকর্মীদের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ ব্যবহার করে কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেট। একজনের প্রাণহানির পর ৩০০ জনকে করা হয় আটক, যাদের মধ্যে আছেন ১০ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চালানোর ঘোষণা দেয়া আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। গ্রেপ্তার হন কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী।
সন্ধ্যায় তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ। তল্লাশিতে ককটেল উদ্ধারের কথাও জানানো হয়। রাতে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে ছুটে যাওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ নিজেরাই বোমা রেখে তাদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দেবে।
পরদিন সকালে ফখরুলকে আগের দিনের মতোই কার্যালয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়। এদিন তিনি নয়াপল্টনেও যেতে পারেননি। আগেই থেকে যান। পুলিশ তাকে বলতে থাকে, ক্রাইম সিনে অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। ক্ষুব্ধ ফখরুল পরে পুলিশের বিরুদ্ধে আনেন রাজনীতিকদের সুরে কথা বলার অভিযোগ।
এই অভিযান কতক্ষণ চলবে, সেই প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলেননি। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট দিনের আগে শেষ হবে কি না, সেটি বিষয় না। আমাদের কথা হচ্ছে এখান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, আমাদের সদস্যদের আহত করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখানে আহত হয়েছে, সাধারণ মানুষ এখানে নিহত হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলমান, কতদিনে শেষ হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না।’
বুধবারের ঘটনায় অনেক মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ‘পল্টন, মতিঝিলসহ কয়েকটি থানায় মামলা হচ্ছে।’
পুলিশের ওপর আক্রমণ ও বোমা উদ্ধারের ঘটনায় অভিযোগগুলো আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কারা আসামি হচ্ছে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘যাদের আমরা আটক করেছি, তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমাদের কাছে আরও তথ্য থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করব।’